আমাদের বিশ্ব • আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
মিনিকেটে চালবাজির পর চালকল মালিকরা এবার ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণে তৎপর
= তিন দিনের ব্যবধানে মিনিকেটে বেড়েছে ৫ টাকা
=ধান কিনতে বস্তা প্রতি ৫০-১০০ টাকা দাম কম দিচ্ছেন মিলাররা
মেরাজ মেভিজ ও এ এইচ রাফি (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : সপ্তাহ খানেক আগে হঠাৎ করেই বেড়ে যায় সব ধরনের চালের দাম। মোটা চালের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও চিকন চালের বাজারে চলছে মিনিকেটের চালবাজি। এদিকে বোরো উৎপাদন করা কৃষকরা আবারও পাচ্ছেন না ধানের সঠিক দাম।
সরেজমিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ বিওসি ঘাটে ধানের মোকাম ও রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি বাজার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন বিপরীতমুখী চিত্র।
কৃষিমন্ত্রীকে দিন কয়েক আগে আশ্বাস দেয়ার পরও মিনিকেটের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন চালকল মালিকরা। গতকাল কারওয়ান বাজারে রশিদের মিনিকেট দেখা গেলো ৪৮-৪৯ টাকায় বিক্রি হতে। যা খুচরায় ৫০-৫২ টাকা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। রশিদ ব্রান্ডের দাম বৃদ্ধির ফলে বেড়েছে সাগর ও মঞ্জু ব্রান্ডের মিনিকেটের দামও। প্রতিষ্ঠান থেকেই আড়ৎদাররা কেজি প্রতি কিনছেন ৪৬ টাকায়। এদিকে কমেছে নাজিরশাইলের দাম। ৬০-৬৫ থেকে কমেছে ২-৩ টাকা। মোটা চালের বাজারও পূর্বের বাড়ন্ত দামে স্থিতিশীল। স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪১ টাকায়।
বাজার দর সম্পর্কে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের আহসান এন্টারপ্রাইজের সত্ত¡াধিকারি এইম এম আমান এ প্রতিবেদককে, বাজারে মোটা চালের দাম কমেনি আবার বাড়েওনি। তবে মিনিকেটের দাম দুই দিন আগে হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যার প্রভাব খুচরা পর্যায়ে পড়তে শুরু করেছে। পাইকারি রেটেই রফিকের মিনিকেটের দাম কেজি প্রতি ৪৫ টাকা থেকে ২ টাকা বাড়িয়ে ৪৭ টাকা করে দেয়া হয়েছে। এতে অনান্য মিনিকেট বিক্রি করা মিলাররাও দাম বাড়ানোর কথা ভাবছেন। অথচ কমেছে নাজিরশাইলের দাম। আমরা চিকন চালের ভোক্তাদের এখন তাই নাজিরশাইল কিনতে উৎসাহিত করছি। আসলে মিনিকেটের বাজারটা পুরোপুরি বিশেষ একটি ব্রান্ডের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় আবার তিনিই চালকল মালিকদের সভাপতি হওয়ায় এটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে মিনিকেট বলে কোনো ধান বা চাল নেই। তবে মিল মালিকদের বিশেষ মিনিকেট চাল, যা অটো রাইস মেশিনে বিভিন্ন ধান ছাঁটাই করে চিকন করে বিক্রি করা হচ্ছে; তার দাম হঠাৎ কেন বাড়ছে? বিশেষ রশিদ মিনিকেটের দাম হঠাৎ কেজিতে ২ টাকা বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চেয়ে বাংলাদেশ অটো রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বাড়তি দামের এ বোঝা ভোক্তা যখন বইছেন তখন কৃষকরা বঞ্চিত ন্যায্য মূল্য থেকে।
সরেজমিনে ধান কেনার সবচেয়ে বড় মোকাম আশুগঞ্জের বিওসি ঘাটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার হাওরাঞ্চলে উৎপাদিত ধান কৃষক ও ব্যবসায়ীরা নৌপথে আশুগঞ্জ মোকামে নিয়ে আসেন। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলে ধান বেচা-কেনা। আশুগঞ্জের প্রায় তিনশ চাতাল কলে ধানের যোগান দেয় এই মোকাম। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ ধান থাকলেও দাম কম হওয়ায় বেচা-কেনার হার কমেছে। আগে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক মণ ধান বেচা-কেনা হলেও গত এক সপ্তাহ ধরে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার মণ ধান বেচা-কেনা হচ্ছে এই মোকামে।
এর কারণ হিসেবে সেই চাল কল মালিকদেরই দুষছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, কৃষকদের কাছ থেকে বিআর ২৮ ধান ৯০০ টাকা মণ এবং বিআর ২৯ ধান ৮০০ টাকা মণ কিনতে হয়। এর সঙ্গে আরও অনেক খরচ আছে। কিন্তু মোকামে এনে বিআর ২৮ বিক্রি করতে হয়েছে ৮০০ টাকা ও বিআর ২৯ বিক্রি করতে হয়েছে ৭৬০ টাকায়। বস্তা প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা লোকসান।
অথচ কারওয়ান বাজারের পরিসংখ্যান বলছে ৫০ কেজি বস্তার বিআর ২৮ ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬৫০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা ও বিআর ২৯ চাল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৮০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়।
এমন অবস্থার মধ্যে ১ ডিসেম্বর থেকে চাল কেনা শুরু করছে সরকার। সিদ্ধ চাল ৩৬ টাকা ও আতপ চাল ৩৫ টাকা দরে কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চলবে ২৮ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান