নতুন সরবরাহে কমছে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম
মেরাজ মেভিজ: সরবরাহ কম হলেও দেশের প্রায় সব বাজারে উঠতে শুরু করেছে আগাম জাতের নতুন পেঁয়াজ। এখনও কিছুটা অপরিপক্ক থাকলেও চলতি সপ্তাহেই এই পেঁয়াজ পুরোপুরি বিক্রির উপযোগী হবে বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা। এদিকে রাজধানীতে পাইকারি পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় দুই বাজার শ্যামবাজার ও কারওয়ানবাজারে নতুন পেঁয়াজের প্রভাবে পড়তে শুরু করেছে সব ধরনের আমদানি করা পেঁয়াজের দরে। তবে ফরিদপুরের ভালো জাতের পুরনো দেশী পেঁয়াজের বাজার এখনও চওড়া। এর কারন সম্পর্কে জানতে চাইলে শ্যামবাজারের পাইকারি ক্রেতা ও কারওয়ানবাজারের বিক্রেতা মো. সুজন এ প্রতিবেদককে বলেন, নতুন পেঁয়াজ এখনও অপরিপক্ব ছোট এবং খেতে অতটা সুস্বাদু নয়। তাই স্বল্প পরিমাণে এই পেঁয়াজ আসতে শুরু করলেও ক্রেতারা সেভাবে কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না। তাই আমরা কিনছি না। তবে নতুন পেঁয়াজে একটা লাভ হয়েছে, গতকাল ও আজ শ্যামবাজারে সবধরনের বিদেশী পেঁয়াজের দাম কমেছে।
সরেজমিনে কারওয়ান বাজারও ও শ্যামাবাজার ঘুড়েও দেখা যায়, শ্যামবাজারে দেশী নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ একেবারেই কম। দাম ১৪০-১৫০ টাকা, যা খুচরায় সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা। তবে ফরিদপুরি পুরনো পেঁয়াজের বাজার এখরও চওড়া। এই পেয়াজই বিকোচ্ছে সবচেয়ে বেশী দামে। ১৯০-১৯৮ টাকায় এই পেঁয়াজ কিনে ২০০-২১০ টাকায় কারওয়ানবাজারে বিক্রি করছেন পাইকারি বিক্রেতারা। যা খুচরায় ২৩০-২৪০ টাকায় কিনছেন ক্রেতা।
এদিকে দেশের বিভিন্ন বাজারের মধ্যে ঝিনাইদহ ও পাবনার বাজার বিশ্লেষনেও দেখা যাচ্ছে এই চিত্র। ঝিনাইদহের বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি কেজি পুরাতন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২শ থেকে ২শ ১০ টাকা দরে। নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে গড়ে ১৬০ টাকা দরে। তবে নতুন দেশি পেঁয়াজের তুলনায় পুরাতনের চাহিদা অনেক বেশি থাকলেও সব ধরনের পেঁয়াজের সরবরাহ কম দেখা গেছে।
জেলা বিপণন কর্মকর্তা গোলাম মারুফ খান জানান, নতুন পেঁয়াজ এখন কম পরিমাণে বাজারে আসছে। ব্যাপকভাবে আসলে দাম কমে যাবে। হয়তো আরও ৭-১০ দিন সময় লাগতে পারে বাজার পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে। এদিকে পাবনার পরিসংখ্যান বলছে, দেশে সবচেয়ে কম দামে দেশী পেঁয়াজ মিলছে এখানেই। পাইকারি বাজারে নতুন পেঁয়াজ ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা ও পুরোনো পেঁয়াজ ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। জেলার পেঁয়াজ উৎপাদনে শীর্ষে থাকা সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলার বিভিন্ন হাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল পাইকারি বাজারে পুরোনো পেঁয়াজ ৭ থেকে সাড়ে ৭ হাজার ও নতুন পেঁয়াজ ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা মণে বিক্রি হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, আগাম জাতের নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় দাম কমতে শুরু করেছে। আর কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ডিসেম্বরেই জেলায় প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন নতুন পেঁয়াজ উঠবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী পাবনা সদর, সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলায় আগাম জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়। চলতি বছর এ তিন উপজেলার বাইরে ঈশ্বরদী, বেড়া, আটঘরিয়া ও চাটমোহর উপজেলার বিভিন্ন মাঠে আগাম জাতের পেঁয়াজ চাষ করা হয়। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করা হয়। এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন।
তবে ক্রেতাদের জন্য সুসংবাদ আছে আরও। নতুন পেঁয়াজের প্রভাবে গত দুই দিনে রাজধানীসহ দেশের সব বাজারে কমেছে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম। সবচেয়ে কমছে চায়নার পেঁয়াজ। যা শ্যামবাজারে ৯০, কারওয়নবাজারে ১০০ হয়ে খুচরায় দাঁড়াচ্ছে ১১০ টাকায়। পাকিস্তানি ও মিশরের পেঁয়াজ ১১০-১৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। যা দিন দুয়েক আগেও ছিল ১৬০ টাকা। তবে বার্মার পেঁয়াজ এখনও সবচেয়ে বেশী। রাজধানীর শ্যামবাজার, কারওয়ানবাজারও খুচরা বাজারে যার দাম ১৬০-১৭০-১৮০ টাকা। স¤পাদনা : নূর মাজিদ