অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে কেউ পার পাবে না, বললেন প্রধানমন্ত্রী
অর্থনীতি ডেস্ক : চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জাতির পিতা মন্ত্রিত্বের পদ ছেড়ে দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়েছিলেন জনগণের সেবা করার জন্য। কাজেই আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দীক্ষা নিতে হবে। বাসস, বাংলানিউজ, বাংলাট্রিবিউন
শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের জন্ম মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। বর্তমান সরকার জনগণের জীবনমান উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করেছে। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি, জনগণের পুষ্টির দিকে নজর দিচ্ছি। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন বিরোধী দলে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাড় গুঁড়ো করে দিয়েছে। চোখ তুলে নিয়েছে। বোমা মেরেছে, গ্রেনেড মেরেছে। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি হলো খাওয়া পার্টি।
সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণের অর্থ কারও ভোগ-বিলাসের জন্য ব্যয় হবে না। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে বিরিয়ানি-পোলাও খাওয়ার চেয়ে সাদাসিধে জীবনযাপন করা অনেক সম্মানের।
টাকা বানানোর নেশাকে রোগ হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসলে টাকা বানানো একটা রোগ, এটাও একটা ব্যাধি, এটা একটা অসুস্থতা। একবার যে টাকা বানাতে থাকে তার শুধু টাকা বানাতেই ইচ্ছে করে। কিন্তু ঐ টাকার ফলে ছেলেমেয়ে বিপথে যাবে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা নষ্ট হবে। মাদকসক্ত হবে। সেটা দেখারও সময় নেই- টাকার পেছনে ছুটছেতো ছুটছেই। আর নিজের পরিবার ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। কাজেই এই ধরনের একটা সামাজিক অবস্থা আমরা চাই না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই সৎ পথে কামাই করে যে চলবে সে সম্মানের সঙ্গে চলবে, সৎ পথে কামাই করে যে থাকবে সে সমাজে সম্মান পাবে।’
দুর্নীতিবাজদের মানুষ গালি দেয় সে কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চোরা টাকা, দুর্নীতির টাকা, অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে যতই বিলাসিতা করুক, মানুষ মুখে হয়তো খুব বাহবা দেবে, পেছনে একটা গালি দেবে- যে এই ব্যাটা দুর্নীতিবাজ, চোর। সেই গালিটা হয়তো শোনা যাবে না, বোঝা যাবে না। কিন্তু সেই গালিটা খেতে হয়। এই কথাটা মনে রাখতে হবে। ’
নেতাকর্মীদের জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা সারাজীবন সাদাসিধে জীবনযাপন করে গেছেন। যারা তার আর্দশের সৈনিক তাদেরকে সেভাবেই চলতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে জনগণের জন্য কতটুকু আমরা করতে পারলাম, সেই চিন্তা করতে হবে। জনগণকে কী দিতে পারলাম সেই চিন্তা করতে হবে। জনগণের কল্যাণ কিসে হবে সেই চিন্তা করতে হবে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের কথা বলেছেন তাদের ভাগ্য কতটুকু গড়তে পারি, তাদের কতটুকু সুন্দর জীবন দিতে পারি, মানুষের ভাগ্য সুন্দরভাবে গড়ে তোলা। প্রত্যেকটা মানুষ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, সেটিই আমাদের লক্ষ্য।’
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে সরকার দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশকে যেন আর পেছনে ফিরে না তাকাতে না হয়, অগ্রগতি যেন অব্যাহত থাকে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন সুন্দর জীবন পায়, উন্নত জীবন পায়, সুশৃঙ্খল জীবন পায়, সমৃদ্ধশালী জীবন পায় সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি, বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’
‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আর কখনো কোনো হায়নার দল বাংলাদেশের মানুষের বুকে চেপে বসতে পারবে না। আর তাদের রক্তচুষে খেতে পারবে না। আর কোনো দুর্নীতিবাজ সন্ত্রাসী, আগুন নিয়ে যারা পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে তারা আর কখনো এদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।’
এর আগে শনিবার সকালে আওয়ামী লীগের ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি ইউনিটের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রধান অতিথি হিসেবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পাশাপাশি পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে কাউন্সিল উদ্বোধন করেন।
সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অধিবেশন শেষ হয়। জিয়ারুল হক