বিশ্বজিৎ দত্ত : প্রকৃত পেঁয়াজ আমদানিকারকদের পেঁয়াজ আমদানিতে নিরুৎসাহিত করে মাত্র ৩টি মৌসুমী আমদানিকারক বড় কোম্পানির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি করায় পেঁয়াজ বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে বিভিন্ন এলাকার কয়েকজন পেঁয়াজ ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, সরকারি হয়রানির কারণে তারা নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে আর পেঁয়াজ আমদানি করছেন না। তাদের বক্ত্যবের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে দেশের কয়েকটি কাস্টম হাউজের কর্মকর্তার কথায়। তারা জানান, নভেম্বরের পর থেকে দেশে সাধারণ পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা আর পেঁয়াজ আমদানি করছে না।
এ বিষয়ে একজন পেঁয়াজ ব্যবসায়ী জানান, এস আলম, সিটি ও মেঘনা গ্রুপকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য বিনা সুদে ব্যাংক লোন দেয়া হয়েছে। তাদের পেঁয়াজ ক্রয়ের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। টিসিবি তাদের আমদানি করা সমস্ত পেঁয়াজ কিনবে। সুতরাং আমরা কেন পেঁয়াজ আমদানি করবো। এই অবস্থায় পেঁয়াজ আমদানি করলে আমাদের লস হবে।
তিনি বলেন, দেশে কয়েক হাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রয়েছেন। তার মধ্যে ১ হাজার টনের উপরে পেঁয়াজ আমদানিকারক ৪০০ জন। এই ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ ব্যবসার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাদের সারা দেশে পেঁয়াজ সরবরাহের নেটওয়ার্ক বা মোকাম রয়েছে। এটি সিটি বা এসআলমের নেই। এখন এসআলম যে ব্যবসা করে সেটি অন্য কাউকে দিলে যেমন ব্যবসাটি হবে না, তেমনি প্রকৃত পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের বাদ দিয়েও ব্যবসা হবে না। মাঝখানে সমস্যার সৃষ্টি হবে। বাজারে অস্থিরতার সৃষ্টি হবে।
এসআলম, সিটি ও মেঘনা গ্রুপের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের আগে কখনো এধরনের আমদানির অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু সরকার যেহেতু বলছে তাই তারা আমদানি করছে। এখানে সরকারই তাদের বিনা সুদে অর্থ দিচ্ছে আমদানি করার জন্য।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ আর এম দেবনাথ বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় বাজারের মাধ্যমেই। ব্যবসা একটা পরম্পরা। হঠাৎ করে কিছু লোককে সুবিধা দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এতে পেঁয়াজের বাজার আরো অস্থির হবে। দাম কমবে বলে মনে হয়না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজও একমত পোষণ করে বলেন, এভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ হয় না। আমরা দেখছি পেঁয়াজের দামতো কমছে না।
উল্লেখ্য, ছোট প্রায় শতাধিক আমদানিকারককে ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা। এলাকার পুলিশ ও র্যাবও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের গোডাউনে হানা দিয়েছে। তবুও পেঁয়াজের বাজারে কোন দরপতন হয়নি।
প্রকৃত পেঁয়াজ আমদানিকারকরা জানান, তারা আমদানির আগেই দেশের বিভিন্ন এলাকার মোকাম থেকে পেঁয়াজ আমদানির অর্থ নিয়ে নেন। পণ্য আমদানির পর স্থলবন্দর থেকেই ব্যবসায়ীদের গোডাউনে তারা পেঁয়াজ পাঠিয়ে দেন। পেঁয়াজ স্থানীয় মোকামে খালাস হওয়ার পর পরই তা ছোট ব্যবসায়ীরা কিনে নেন। সুতরায় পেঁয়াজ গুদামজাত করার যে কথা বলা হচ্ছে তা সত্য নয়। যদি সত্য হতো তাহলে এতোদিনে পেঁয়াজের গুদাম সরকার বের করতে পারতো।
প্রতি বছর দেশে ২২ লাখ টন উৎপাদন হয়। কিন্তু চাহিদা রয়েছে ৩২ লাখ টনের। চাহিদার সঙ্গে যোগানের ঘাটতি রয়েছে ১০ লাখ টন।