৩৬ হাজার কোটি টাকায় মাতারবাড়িতে নির্মিত হচ্ছে ১২শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র
শাহীন চৌধুরী : দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে একের পর এক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি করে যাচ্ছে সরকার। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ৩৬ হাজার কোটি টাকায় মাতারবাড়িতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হবে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়ন করবে। ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে জাইকার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ হবে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে। মাতারবাড়ী ইউনিয়নের ১ হাজার ৪১৪ একর জমির ওপর এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ঋণসহায়তা হিসেবে জাপান সরকার দেবে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি ৩ লাখ টাকা। বাকি ৭ হাজার ৪৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার জোগান দিচ্ছে সরকার। সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে বাস্তবায়নাধীন যে ১০টি প্রকল্প রয়েছে, তার মধ্যে ব্যয়ের বিবেচনায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরই রয়েছে মাতারবাড়ীর এই প্রকল্পটি।
দরপত্র প্রক্রিয়া চলার মধ্যেই ২০১৬ সালের জুলাইয়ে গুলশানের হলি আর্টিজান হামলায় জাপানি প্রকৌশলীসহ ১৭ বিদেশি নিহত হওয়ায় সেই দরপত্র প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। পরে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপানি কনসোর্টিয়াম সুমিতোমো করপোরেশন, তোশিবা করপোরেশন ও আইএইচআই করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)।
পরিবেশ ও সামাজিক প্রভাব বিবেচনায় প্রকল্পের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে জাইকার। এ নীতিমালা অনুযায়ী, পরিবেশ ও সমাজের ওপর প্রভাব বিবেচনায় প্রকল্পগুলোকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। জাইকার সরাসরি অর্থায়ন করা প্রকল্পগুলোকে এ, বি ও সি শ্রেণি এবং তৃতীয় কোনো সংস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা প্রকল্পগুলোকে ভাগ করা হয় ফিন্যান্সিয়াল ইন্টারমিডিয়ারি (এফআই) শ্রেণিতে। পরিবেশ ও সমাজের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে এমন প্রকল্পগুলোকে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে নীতিমালায়। মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পটিও রয়েছে ‘এ’ শ্রেণিতে। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক জাপান সফরকালে চারটি উন্নয়নসহায়তা প্রকল্পের অংশ হিসেবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
সূত্রমতে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নেয় ২০১৫ সালে। প্রাথমিকভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০২২ সালের জুনের মধ্যে উৎপাদনে যাওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তী সময়ে তা সংশোধন করে ২০২৪ সালের জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়। যদিও গত চার বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১৯ শতাংশ। ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৯০ কোটি টাকা, যা মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের ১৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে বিপিডিবি’র পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কয়লাভিত্তিক অন্যতম বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জাইকা আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। প্রথমদিকে দিকে অর্থায়নের ব্যাপারে জাপান কিছুটা অনাগ্রহী হলেও এখন কোন সমস্যা নেই। আশাকরি নির্দিষ্ট সময়েই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান