রুম্পাকে হত্যা করা হয়েছে, ধারণা পুলিশের
সুজন কৈরী ও আল-আমিন (ময়মনসিংহ) : রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার মৃত্যু নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি। কাউকে আটকও করা হয়নি। রুম্পার মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ সদরের বিজয়নগরের নিলক্ষীয়ায় রুম্পার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
রুম্পা হত্যার বিচার দাবিতে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। গতকাল সকালে সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। রুম্পার সহপাঠীরা বলছেন, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর শিক্ষার্থী সৈকত নামের এক ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। বেশ কিছুদিন ধরে তাদের মধ্যে মনমালিন্য চলছিলো।
গতকাল ফজরের নামাজের পর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায় রুম্পার মৃতদেহ। মৃতদেহ পাওয়ার পর শোক স্তব্ধ হয়ে যায় রুম্পার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসী। একমাত্র মেয়েকে চিরতরে বিদায় দিয়ে বাবা পুলিশ সদস্য রোকন উদ্দিন নিজেকে সামলে নিতে পারছেন না কোনো ভাবেই। কিছু বলার চেষ্টা করলেও পারছিলেন না। হঠাৎ চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন ‘তোরা এত্ত খারাপ, তোদের মনে মায়া দয়া নেই। তোরা কোনো মায়ের পেট থেকে পরিসনি, তোদের বিচার যেন দেইখ্যা যাইতে পারি’।
নিহত রুম্পার চাচা নজরুল ইসলাম বলেন, আমার ভাতিজির সঙ্গে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্র্সিটির একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিলো। তাদের ভেতরে ঝামেলা চলছিলো বলে আমরা শুনেছি। তবে এই হত্যাকা-ের সঙ্গে ওই ছেলের কোনো সর্ম্পক আছে কি না, তা আমরা জানিনা। তিনি আরো জানান, তার ভাতিজি পাশের একটি বাড়িতে টিউশনি করতে গিয়েছিলো। সেখান থেকে সন্ধ্যার দিকে নিজ বাসার নিচে যায় রুম্পা। এরপর রুম্পা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়–য়া তার এক চাচাতো ভাইকে ফোন করে বাসার নিচে স্যান্ডেল আনতে বলে। পরে সে স্যান্ডেল নিয়ে এলে পায়ের হিল খুলে স্যান্ডেল পরে রুম্পা। এরপর ওই চাচাতো ভাইয়ের কাছে রুম্পা কানের দুল, মোবাইল, ঘড়ি, হিল জুতা ও টাকাসহ ব্যাগ দিয়ে দেয়। সেগুলো ওপরে নিয়ে যেতে বলে তাকে। সেইসঙ্গে মাকে বলতে বলে, তার আসতে দেরি হবে। আমার কাছে প্রশ্ন কেন সে এগুলো রেখে যাবে? আত্মহত্যার পরিকল্পনা? তাই হলে তো বাড়ির ছাদ আছে। ওখানে যাবে কেন? নাকি কোনো ঝামেলা ছিলো, তাই এগুলো রেখে গিয়েছিলো? পুলিশের রমনা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার শেখ মোহাম্মদ শামীম বলেন, রুম্পাকে সিদ্ধেশরীর সার্কুলার রোডের আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের পেছনের একটি বাড়ির ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হতে পারে। এ ঘটনায় রমনা থানার এসআই আবুল খায়ের বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আমরাও ধারণা করছি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। নিহত রুম্পা স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের (৬৯ ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন। তার মা ও ভাইয়ের সঙ্গে শান্তিবাগের ২৫৫ নম্বর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তার বাবা রোকন উদ্দিন পুলিশ বিভাগে পরিদর্শক হিসাবে কর্মরত। তিনি বর্তমানে হবিগঞ্জে কর্মরত।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শেখ নাহিদ নেওয়াজ বলেন, ৬৯ ব্যাচের ওরিয়েন্টশন ক্লাশ তিনি নিয়েছিলেন। রুম্পা একজন শান্ত ও লক্ষ্মী মেয়ে ছিল। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রে বার্ড নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
রমনা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, তাকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে বা হত্যার আগে তিনি ধর্ষনের শিকার হয়েছেন কি নাÑসেটি ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে জানা যাবে। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান