সাক্ষাৎকারে ত্রিপুরার বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক জিতেন্দ্র সিংহ ত্রিপুরী-মনিপুরীসহ সবাই একাত্তরে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করেছিলো
প্রিয়াংকা আচার্য্য : জিতেন্দ্র সিংহ মনিপুরি ও বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চা করেন। এ বয়সেও প্রচুর বই পড়েন। নিয়মিত লেখালিখি করেন। শহরের অদূরে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। ৩০ নভেম্বর তার বাসায় বসে শুনলাম একাত্তরে মনিপুর, ত্রিপুরীসহ অন্যান্য জাতির ভূমিকার কথা।
‘আগরতলা থেকে প্রায় ১৫ মাইল দূরে চইলাম বলে একটা জায়গা আছে। সেখানকার একটা স্কুলে আমি তখন শিক্ষকতা করতাম। বাংলাদেশের ভেতরে কি হয়েছে তা আমরা চাক্ষুস না করলেও। সেখান থেকে প্রচুর লোককে তখন এখানে আশ্রয় দিতে হয়েছে। আমরা তাদের কাছে পাকিস্তানিদের নৃশংসতার কথা শুনতাম।’ ‘ত্রিপুরী পাড়া, মনিপুরি পাড়ায় ক্যাম্প হয়েছিল। ত্রিপুরার উত্তর দিক থেকে আসলে প্রথমে ধর্মনগর, কৈলাস শহর, কমলপুর, খোয়াই, আগরতলার সদর মানে বামুতিয়া অঞ্চল এগুলো মনিপুর সীমান্ত ঘেষা। এখানেও অনেকগুলো ক্যাম্প ছিল। স্থানীয়রা তাদের সহায়তায় যথাসাধ্য কাজ করেছেন। ওপাড় থেকে সবাই যে ক্যাম্পে ছিলেন, তা নয়। অনেকেই আত্মীয়দের বাড়িতে উঠেছিলেন। আবারও স্থানীয়রা বিপদগ্রস্ত অনেক অপরিচিতকেও নিজবাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। খোয়াইয়ে কল্যাণপুর নামে একটা জায়গা আছে। সেখানে অনেক মনিপুরি থাকেন। তারা অনেককে নিজবাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন বলে আমি জানি।’
‘ত্রিপুরায় সরকারিভাবে ১৯টা উপজাতি বা জনজাতি আছে। প্রত্যেক জাতির লোকই মুক্তিযুদ্ধে বাংরাদেশের পক্ষে ছিলেন। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সবাই বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের যুদ্ধে তাদের পাশে থেকেছেন। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি বাঙালি হলেও রাজ্যের মুখ্য ভাষা বাংলা ও ত্রিপুরী। শুধুমাত্র বাঙালিরা সমর্থন করলে গোটা রাজ্যের পক্ষ থেকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা লাখ লাখ লোকেদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা সম্ভব হতো না। প্রত্যেক জাতির সমর্থন ছিলো বলেই এখানে রাজ্যের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ সহায়তা করা গেছে।’
‘বড় বড় ক্যাম্পগুলো পূর্ব পাকিস্তানের বর্ডার অঞ্চলের কাছে ছিল। আমি বামুটিয়া অঞ্চলের ক্যাম্পে গিয়েছিলাম। সেখানে অনেক লোককে থাকতে দেয়া হয়েছিল। শুধু থাকা-খাওয়া নয় শরণার্থীদের চিকিৎসা সহায়তাও রাজ্যের পক্ষ থেকে করা হয়েছিল।’
‘ত্রিপুরার প্রত্যেকেই যুদ্ধে যার যার মতো করে কাজ করেছে। এখানকার প্রতিটি সংবাদপত্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লেখালিখি হয়েছে। দৈনিক সংবাদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। সাংবাদিক বিকচ চৌধুরী মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে ঢুকে খবর সংগ্রহ করেছেন। তিনি এখানকার একমাত্র সাংবাদিক যিনি পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল।’