আমরণ অনশনে উত্তাল খুলনা, প্রতিদিন কোটি টাকা ক্ষতি
শরীফা খাতুন : পাটকল শ্রমিকদের আমরণ টানা অনশনে উত্তাল হয়ে উঠেছে খুলনার শিল্পাঞ্চল এলাকা। এরইমধ্যে অনশনে মারা যাওয়া শ্রমিক আব্দুস সাত্তারের জানাজা শুক্রবার সকাল ১০ টায় প্লাটিনাম জুট মিল গেটে অনুষ্ঠিত হয়। টানা অনশনে অসুস্থ হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মারা যান প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক আব্দুস সাত্তার (৫৫)।
এদিকে, মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে শ্রমিকদের চলমান আমরণ অনশনের কারণে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯ পাটকলে প্রতিদিন এক কোটি টাকার উৎপাদন ক্ষতি হচ্ছে। এসব পাটকলের ৩৩ হাজার শ্রমিক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রেখে গত মঙ্গলবার বিকাল থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। এ কারণে চার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি) সূত্র জানায়, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯ পাটকলে প্রতিদিন পাটজাত পণ্যের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৭২.১৭ টন। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৮৬.৩৯ টন। সর্বশেষ ৭ ডিসেম্বরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলীম জুট মিলের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১০.৫০ টন। সেখানে উৎপাদন হয়েছে ৩.৬৩ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৪.৭৯ শতাংশ। কার্পেটিং জুট মিলের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৭.৬৮ টন। উৎপাদন হয়েছে ২.৯০ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৪৩.৭৫ শতাংশ।
ক্রিসেন্ট জুট মিলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৭০.৫০ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছে ২৩.০৬ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩২.৬৫ শতাংশ।
দৌলতপুর জুট মিলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১০.১১ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছে ২.৪৫ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২২.১৬ শতাংশ। ইস্টার্ন জুট মিলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১৬.৩৪ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছে ৭.৯৭ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪০.০৯ শতাংশ। জেজেআইয়ের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২২.২০ টন। উৎপাদন হয়েছে ৮.১৫ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৩.২৪ শতাংশ। খালিশপুর জুট মিলের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪৭.৫০ টন। উৎপাদন হয়েছে ১২.৩০ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২২.৫৮ শতাংশ।
প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৫০.৫৪ টন। উৎপাদন হয়েছে ১৫.৯৮ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৯.৭২ শতাংশ। এছাড়া, স্টার জুট মিলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩৬.৮০ টন। উৎপাদন হয়েছে ৯.৯৫ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২০.৯৫ শতাংশ।
ওই দিন হেসিয়ান ও স্যাকিংসহ জুট মিলগুলোতে ৮০.২১ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য মজুদ ছিলো।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, আমরা শপথ করেছি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বো না। সরকারকে ঘোষণা করতে হবে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করেছি। আমরা বিগত সাড়ে চার বছরে অনেক আশ্বাস শুনেছি। এখন মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের ঘোষণা চাই।
ভাইস প্রেসিডেন্ট তরিকুল ইসলাম বলেন, আমরা না খেয়ে রাজপথে আন্দোলন করছি। আর প্রশাসন আমাদের নিয়ে তামাশা করছে। দাবি বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগই নেয়া হচ্ছে না।
প্লাটিনাম জুটমিলের মৃত শ্রমিক আব্দুস সাত্তারের পরিবারকে বিভাগীয় শ্রম কর্মকর্তা মিজানুর রহমান নগদ ৫০ হাজার টাকা হস্তান্তর করেছেন। এদিকে প্রধান মন্ত্রী শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির বিষয়ে আন্তরিক বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি। বৃহস্পতিবার রাতে খুলনা যুগ্ম শ্রম অধিদপ্তরে আয়োজিত ব্রিফ্রিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের মজুরী কমিশনের বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আহ্বানে আন্তঃমন্ত্রণালয়ে আগামী ১৫ ডিসেন্বর বৈঠক ডেকেছে। সেখানে মজুরী কমিশন বিষয় সমাধান হবে বলে তিনি জানান। সম্পাদনা : মুরাদ হাসান