সাক্ষাৎকারে ধ্রুবপ্রসাদ দেববর্মন ত্রিপুরার মহারাজা কিরিট বিক্রম আগত শরণার্থীদের সাহায্যে হাত বাড়িয়েছিলেন
প্রিয়াংকা আচার্য্য : ধ্রুবপ্রসাদ দেববর্মন ত্রিপুরা রাজপরিবারের ঘনিষ্ট ব্যক্তি। প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ শচীনদেব বর্মণের ভাতিজা তিনি। স্থানীয়রা তাকে ধ্রুব কর্তা বলেই চেনেন। সরকারি চাকরি করতেন। এখন অবসর জীবনযাপন করেন। থাকেন আগরতলা শহরেই। একাত্তর নিয়ে শুনলাম তার অভিজ্ঞতার কথা। ‘আগরতলার প্রত্যেকেই কমবেশি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নানাভাবে অংশ নিয়েছে। শহরের পাশে যুদ্ধ চললেও আমরা অনেকটা নির্বিঘেœ ছিলাম। যুদ্ধের ত্রাস আমাদের কাবু করতে পারেনি। যদিও শেষদিকে আগরতলা শহরে শেলিং হয়েছে। রাজবাড়িতে একটা গোলা পড়েছিল। এছাড়া বনমালীপুরে শেল পড়ে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়। তাদের মধ্যে আমার একজন ঘনিষ্ট বন্ধুও মারা যায়।’
‘আমাদের মূল বাড়িটা ছিল গুলবাজারের পুরাতন গেস্ট হাউজ। একাত্তরে আমরা সেখানেই ছিলাম। বর্তমানে যেখানে নার্সিং হোম কেয়ার অ্যান্ড কিউর অফিসটা আছে সেখানটায় ছিল বাংলাদেশের অফিসটা। আর উল্টোদিকের খালি ৫ গ-া জায়গাটা ছিল আমার। আমার বন্ধু নীরেন ভট্টাচার্যের বাড়ি ছিল পাশেই। সেখানে প্রায়ই আসতাম। অনেকের সঙ্গেই আমার পরিচয় হয়েছিল।’
‘১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে এখানে প্রচুর লোকের সমাগম ঘটেছিল। সবাই বাংলাদেশ অফিসে জড়ো হতে শুরু করে। থাকা-খাওয়ার জন্য বড় জায়গা দরকার। একদিন আমাকে ডেকে তারা বললো আমরা আপনার খালি জায়গাটা ব্যবহার করতে চাই। এর বিনিময়ে কিছু ভাড়াও দিতে রাজি আছি। আমি সাথে সাথে বললাম, আমাকে কিছু দিতে হবে না। এটাতো খালিই পরে আছে। আপনারা ব্যবহার করেন।’
‘পাশে একটা ছোট্টঘর ছিল। মহারাজার আমলে এটাকে বলা হতো গোমতী ঘর। সেখানে পাহারাদাররা থাকতো। সেই ঘরটাও তারা ভাড়ার বিনিময়ে ব্যবহার করতে চাইলে আমি বললাম, দেখেন আপনারা কুমিল্লা থেকে আসছেন। আর কুমিল্লা আমার জেঠামশায় শচীনদেব বর্মণের বাড়ি। আর একসময় বাংলাদেশও ভারতের সাথেই ছিল। আপনারা আমাদেরই লোক ভাড়া লাগবে না, আপনারা ঘরটা ব্যবহার করেন।’
‘তখন মহারাজা কিরিট বিক্রম কিশোর মানিক্য আগরতলাতেই ছিলেন। একদিন তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন। বললেন, আপনি তো বাংলাদেশ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের সাহায্য করছেন, আমিও আপনার মতো তাদের জন্য কিছু করতে চাই। আমি বললাম আমি তো তেমন কিছুই করিনি, খালি জায়গাটা শুধু ব্যবহার করতে দিয়েছি। তিনি তখন বললেন, কোনও কিছু প্রয়োজন হলে বলেন আমিও তাদের সাহায্য করতে চাই। যদি লাগে তো রাজপ্রাসাদের নিচতলা, যেটা তখন তুষাখানা হিসেবে সেসময় ব্যবহার হচ্ছিল সেটা খালি করে শরণার্থীদের থাকতে দিবেন।’
‘এই কথাটা আমি এখানে আসা বাংলাদেশিদের জানাই। তারা বললেন এরই মধ্যে শরণার্থীদের জন্য তারা নানা জায়গায় ব্যবস্থা করেছেন। মহারাজা যে তাদের সাহায্য করতে অভিপ্রায় প্রকাশ করেছেন এতেই তারা সন্তুষ্ট।’