বার্তা২৪.কম : [২] বোরো ধানের গোলা চলনবিল। দিগন্ত বিস্তৃত বিলজুড়ে দোল খাচ্ছে কাঁচা-পাকা ধানের শীষ। আবাদ ছাড়িয়েছে লক্ষমাত্রা, নেই প্রাকৃতিক দুর্যোগও। তবে বিল ভরা ধান কৃষকের গোলায় উঠবে কি-না, তা নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে করোনা মহামারি। বর্তমান পরিস্থিতিতে ধান কাটার শ্রমিক পাচ্ছেন না চলনবিলের কৃষকরা।
[৩] প্রতিবছর কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনাসহ ১৬ জেলা থেকে কয়েক হাজার শ্রমিক ধান কাটাতে আসেন চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া উপজেলায়। এবার করোনা দুর্যোগে কোনো শ্রমিক আসতে পারেনি চলনবিলে। এতে সময়মতো ধান কাটা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন চলনবিলের কৃষক। [৪] শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় ৫০ ভাগ ভর্তুকি মূল্যে সিংড়ার জন্য ৬টি কম্বাইন হার্ভেস্টার মেশিনের ব্যবস্থা করেছে কৃষি বিভাগ। রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে হার্ভেস্টার মেশিন দ্বারা ধান কাটা শুরু হয়েছে সিংড়ায়। তবে বিপুল পরিমাণ ধান মেশিনে কেটে সময়মতো ঘরে তোলা সম্ভব নয় বলছেন কৃষকরা। [৫] জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সিংড়ায় ৩৪ হাজার ৫ শত হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রা বোরোর আবাদ হয়েছে ৩৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর। [৬] কৃষকরা জানান, প্রায় প্রতিবছরই অকাল বন্যার কারণে বোরো ধানের ফলন বিপর্যয় ঘটে। এবার কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় ফলন ভালো হয়েছে। বোরো চারা রোপণের পরপরই অনেক কৃষক শ্রমিকদের সাথে ধান কাটার চুক্তি সম্পাদন করেন। সে হিসেবে ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য খোলা পরিষ্কার, ধান মাড়াই করার যাবতীয় কৃষি উপকরণ সংগ্রহ ও শ্রমিকদের সাথে যোগাযোগসহ সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন তারা। হঠাৎ করোনার কারণে নিজ জেলায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন ধান কাটতে আসা শ্রমিকরা। স্থানীয় শ্রমিকরাও বাইরে বের হচ্ছেন না। এতে সময়মতো মাড়াই, শুকানো, সংরক্ষণ বা বিক্রি বিঘিœত হবে।
[৭] কলম ইউনিয়নের কৃষক রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমার ১৫ বিঘা জমিতে ধান প্রায় পেকে গেছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর ফলন ভাল হবে আশা করছি। তবে শ্রমিকদের সাথে কথা বললেও কিভাবে আসবেন তারা, তা এখনো ঠিক হয়নি। বাইরের শ্রমিকরা না এলে বিপদের সীমা থাকবেনা।
[৮] লালোর ইউনিয়নের কৃষক মাজেদুর রহমান বলেন, শ্রমিক আসতে না দিলে এবার মাঠেই থাকবে ধান। আমাদের নিজেদের পক্ষে এতো ধান কাটা সম্ভব না। তাছাড়া হার্ভেস্টার মেশিনও আমরা সময়মতো পাবো না বলে আশঙ্কা করছি। [৯] জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার বলেন, বাইরে থেকে আগত ধান কাটা শ্রমিকদের জেলায় প্রবেশের ব্যাপারে প্রক্রিয়া শুরু করেছি।
চলনিলের চাষিরা শ্রমিকের চাহিদা দিচ্ছেন। যেসব জেলা থেকে তারা শ্রমিক আনতে চান, সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক শ্রমিকদের সুস্থতার প্রত্যয়ন প্রদান সাপেক্ষে আসার সুযোগ দিতে প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, নাটোর জেলার ৭টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৫৭ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এ থেকে ৩ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। আপেল মাহমুদ