সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এত উচ্চ প্রবৃদ্ধি বিস্ময়কর : সিপিডি
সোহেল রহমান : বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ’ (সিপিডি) বলেছে, ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’ (বিবিএস) প্রণীত জিডিপি হিসাবের অর্ধেকের বেশি তথ্য বর্তমান সময়ের প্রকৃত বিশ্বাসযোগ্য উপাত্ত নয়। যেসব তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো ২০১৯-২০ অর্থবছরের ৯ মাস (জুলাই ২০১৯-মার্চ ২০২০) পর্যন্ত সময়ের উপাত্ত নির্ভর। সরকার প্রদত্ত বাজেট উপাত্ত থেকে এ হিসাব করা হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির সাময়িক হিসাবে করোনাজনিত ক্ষতি এবং প্রায় দুই মাস সাধারণ ছুটির ফলে অর্থনৈতিক স্থবিরতা প্রতিফলিত হয়নি।
রোববার এক ভার্চুয়াল ব্রিফিং-এ জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিবিএস প্রদত্ত হিসাবের প্রতিক্রিয়ায় সংস্থাটি এ কথা বলেছে। ব্রিফিং-এ জিডিপি প্রবৃদ্ধির বিশ্বাসযোগ্য হিসাব প্রণয়নে তথ্য-উপাত্ত পরিমাপের দুর্বলতাগুলো জরুরি ভিত্তিতে চিহ্নিত করার সুপারিশ করে সিপিডি বলেছে, আগামী দিনের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে এটি দেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্যের নির্ভরযোগ্য চিত্র নয়। ব্রিফিং-এ বিবিএস-এর তথ্য-উপাত্তের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে ১২ দফা সুপারিশও করা হয়েছে।
গত অর্থবছরে সরকার ঘোষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু করোনাজনিত কারণে সংশোধিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ২ শতাংশ অর্জিত হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়। এর বিপরীতে সম্প্রতি সমাপ্ত অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ বলে সাময়িক হিসাব প্রকাশ করেছে বিবিএস।
এদিকে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের ব্যাপক প্রভাবে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেরও জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অনেক কমে যাবে বলে ইতিপূর্বে পূর্বাভাস দিয়েছিল সিপিডি। সংস্থাটির মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি হবে না। তবে শুধু সিপিডি-ই নয়, বিশ্বব্যাংক গত এপ্রিলে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ২ থেকে ৩ শতাংশ এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল গত জুনে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল।
বিবিএসএস-এর পরিসংখ্যান তুলে ধরে সিপিডি বলেছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে হিসাব দেয়া হয়েছে তা গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষি, শিল্প ও সেবাখাতের প্রবৃদ্ধি এবং জিডিপি-তে এসব খাতের অবদান এর আগের অর্থবছরের তুলনায় কমেছে। এর মধ্যে খাতওয়ারি হিসাবে কৃষিখাতের প্রবৃদ্ধি দশমিক ৮১ শতাংশ, শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ কমেছে। আর জিডিপি-তে অবদান কমেছে যথাক্রমে দশমিক ৮ শতাংশ, ১ দশমিক ৯ শতাংশ ও দশমিক ১ শতাংশ।
অন্যান্যের মধ্যে উৎপাদনমুখী খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, নির্মাণ ও পরিবহন খাতেও প্রবৃদ্ধি কমেছে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি ২৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৭ শতাংশে।
ব্রিফিং-এ জিডিপি পরিমাপের ক্ষেত্রে আরও ছয় ধরনের জরিপ অন্তর্ভূক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑএন্যুয়াল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যান্ড ইনস্টিটিউশন সার্ভে (এইআইএস); প্রাইভেট কমার্শিয়াল মেকানাইজড ট্রান্সপোর্ট সার্ভে; সার্ভে অব প্রাইভেট এডুকেশন সার্ভিস ইন বাংলাদেশ; সার্ভে অব প্রাইভেট হেল্থ এস্টাব্লিশমেন্ট; সার্ভে অব নন-প্রফিট ইনস্টিটিউশনস সার্ভি হাউজহোল্ড ও ফার্ম ফরেস্ট সার্ভেস। সম্পাদনা : রেজাউল