বিশ্ব অর্থনীতির ৬৬ ভাগ দখলে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ ১০ দেশ
ইয়াসিন আরাফাত : একটি দেশের অভ্যন্তরে এক বছরে চূড়ান্তভাবে উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবার বাজারে সামষ্টিক মূল্যই হচ্ছে সেদেশের জিডিপি। ২০১৯ অক্টোবরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেয়া ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক ডাটাবেজে বলা হয়েছে, শীর্ষ অর্থনীতির ১০টি দেশের হাতেই আছে বিশ্বের মোট অর্থনীতির ৬৬ ভাগ, আর শীর্ষ ২০ দেশ মিলে দখলে রেখেছে ৭৯ শতাংশ। বিশ্ব অর্থনীতির মাত্র ২১ শতাংশ ভাগাভাগি করেছে ১৭৩টি দেশ।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম বলছে, ১৯৯২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র। তবে ২০২৪ সালেই যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশ হবে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান হবে দ্বিতীয়, ভারত থাকবে তৃতীয় অবস্থানে। যেখানে ১৯৯২ সাল কিংবা ২০০৮ সালের তালিকায় শীর্ষ ১০ দেশের স্থানে ভারতের নামই ছিলো না। তবে ২০২৪ সালে শীর্ষ দশের তালিকায় ওপরের দিকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বাকি সব দেশই থাকবে এশিয়ার। তালিকার নিচের অবস্থানে থাকবে ইউরোপের দেশগুলো। অষ্টম অবস্থানে থাকবে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। আইএমএফ এর দেয়া তথ্য মতে, বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে এখনো শীর্ষে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে আসা বিপর্যয়ে বদলে যেতে পারে এ ব্যবস্থা। ২০১৮ সালে দেশটির জিডিপি’র আকার ছিল ২০.৫৮ ট্রিলিয়ন ডলার। বর্তমান আকার ২১.৪৪ ট্রিলিয়ন ডলার। বলা হচ্ছে, চলতি বছরের মধ্যেই এর আকার দাঁড়াবে ২২.৩২ ট্রিলিয়ন ডলারে। তবে, এই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল করোনা মহামারীর আগে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ভারসাম্য আনা, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরির দাবি দীর্ঘদিনের। ধীরে ধীরে সেই জায়গাটাই দখল করতে যাচ্ছে চীন। চীনের বর্তমান জিডিপির আকার ১৪.১৪ ট্রিলিয়ন ডলার। নমিনাল হিসেবে চীনের জিডিপির আকার ২য় শীর্ষ হলেও ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে (পিপিপি) চীনই শীর্ষ অর্থনীতির দেশ। এই হিসাবে দেশটির জিডিপির আকার ২৫.২৭ ট্রিলিয়ন ডলার। বলা হয়েছিল, পিপিপির হিসাবে ২০২৩ সালে চীনের জিডিপি দাঁড়াবে ৩৬.৯৯ ট্রিলিয়ন ডলারে। তৃতীয় স্থানে আছে জাপান। বর্তমানে দেশটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সাথে সম্পর্কিত অর্থনৈতিক খাতগুলি অত্যন্ত দক্ষ ও প্রতিযোগিতাশীল। দেশটির নমিনাল জিডিপি ৫.১৫ ট্রিলিয়ন ডলার আর ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে এর পরিমাণ ৫.৭৫ ট্রিলিয়ন ডলার। গত বছরই (২০১৯) দেশটি ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি মাইলফলক স্পর্শ করে। ইউরোজোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানি ইতিমধ্যে মন্দা অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে। বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর দেশটির নমিনাল জিডিপি ৩.৮৬ ট্রিলিয়ন ডলার আর ক্ষয় ক্ষমতার ভিত্তিতে জিডিপির আকার ৪.৪৪ ট্রিলিয়ন ডলার। ইউরোপের মধ্যে এই দেশের অর্থনীতির আকারই সবচেয়ে বড়। বিশ্ব অর্থনীতির চতুর্থ স্থানে থাকা ভারতের নমিনাল জিডিপির আকার ২.৯৪ ট্রিলিয়ন ডলার আর ক্ষয় ক্ষমতার ভিত্তিতে (পিপিপি) এর পরিমাণ ১০.৫১ ট্রিলিয়ন। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে টপকে গত বছর (২০১৯) ৫ম স্থানে উঠে আসে দেশটি। দেশটির গবেষণা সংস্থা এসঅ্যান্ডপি বলছে, চলতি অর্থবছরে অর্থনীতি ৫ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হলেও ২০২২ সালে তা সাড়ে ৮ শতাংশ হারে সম্প্রসারিত হবে। বর্তমানে করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হলো যুক্তরাজ্য। এরপরেও বিশ্ব অর্থনীতির ষষ্ঠ স্থান ধরে রেখেছে দেশটি। দেশটির নমিনাল জিডিপির আকার ২.৮৩ ট্রিলিয়ন ডলার আর পিপিপি ভিত্তিতে এর পরিমাণ ৩.০৪ ট্রিলিয়ন ডলার। দেশটির সেবা খাতই এর জিডিপির ৭৫ ভাগের যোগান দেয়। ফ্রান্সের নমিনাল জিডিপির আকার ২.৭১ ট্রিলিয়ন ডলার আর পিপিপিতে এর পরিমাণ ২.৯৬ ট্রিলিয়ন ডলার। বেকার সমস্যা দেশটিতে বেশ প্রকট। বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবে ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬ সালে দেশটিতে কর্মসংস্থানের বাইরে ছিল ১০ শতাংশ মানুষ। ২০১৭ সালে এই হার কিছুটা কমে এসে দাঁড়ায় ৯.৬৮ শতাংশে। অষ্টম স্থানে থাকা ইতালির নমিনাল জিডিপি ১.৯৯ ট্রিলিয়ন ডলার হলেও পিপিপিতে এর আকার ২.৪০ ট্রিলিয়ন ডলার। গত বছরের পূর্বাভাস, ২০২৩ সালে দেশটির নমিনাল জিডিপি বেড়ে দাঁড়াবে ২.২৬ ট্রিলিয়ন ডলারে। বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্রাজিলের অবস্থান নবম। দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির নমিনাল জিডিপির আকার ১.৮৫ ট্রিলিয়ন ডলার আর পিপিপিতে ৩.৩৭ ট্রিলিয়ন ডলার। দেশগুলোর মধ্যে সর্ব শেষে থাকা কানাডার নমিনাল জিডিপি ১.৭৩ ট্রিলিয়ন ডলার আর পিপিপিতে এর পরিমাণ ১.৮৪ ট্রিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালে দেশটির নমিনাল জিডিপি ২.১৩ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। এর পরের ১০টি দেশ যথাক্রমে রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া, নেদারল্যান্ড, সৌদি আরব, তুরস্ক, ও সুইজারল্যান্ড।