ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৪৭ বাংলায় রূপান্তর ও যুগোপযোগী করায় জটিলতা, সাড়া নেই স্টেকহোল্ডারদের
সোহেল রহমান : কোভিড-১৯ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ উদ্যোগ নিয়েছে।
জানা যায়, প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে ইতিমধ্যেই বাংলা ভাষায় আইনটির একটি খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলায় প্রাথমিকভাবে আইনটির নামকরণ করা হয়েছেÑ‘বৈদেশিক মুদ্রা ও বিনিময় ব্যবস্থাপনা আইন ২০২০’। আইনটির বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামতের জন্য এটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে আপলোড করে এ বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য ২১ দিন সময়সীমা বেঁধে দেয়া হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সকল ব্যাংকিং কার্যক্রম পর্যালোচনাক্রমে বিদ্যমান আইনগত-নীতিগত ও পদ্ধতিগত প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে সেগুলো দূরীকরণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য গত ২৩ জুন বাংলাদেশ ব্যাংককে এ বিভাগ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে এবং গত ১৯ জুলাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। বাংলায় প্রণীত আইনটির ওপর পর্যালোচনা ও প্রয়োজনীয় সংশোধনের লক্ষ্যে সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে গত সোমবার।
বৈঠক সূত্র জানায়, ৭৩ বছর আগে ইংরেজিতে প্রণীত অতি গুরুত্বপূর্ণ এই আইনটি বাংলা ভাষায় প্রণয়ন করার কাজটি বেশ জটিল। কারণ ইংরেজি বহু শব্দের যথাযথ বাংলা প্রতিশব্দ পাওয়াটা বেশ কঠিন, আবার পাওয়া গেলেও দেখা যায় সেটা সাধারণ মানুষের জন্য দুর্বোধ্য। এছাড়া অনেক ইংরেজি শব্দের বহুমাত্রিক অর্থ রয়েছে।
সূত্রমতে, বাংলায় আইনটির শিরোনাম কী হবেÑএ নিয়েও বৈঠকে নানা ধরনের মতামত পাওয়া গেছে। এছাড়া বর্তমানে আইনটির কিছু সংশোধন বা নতুন সংযোজন-বিয়োজন তো হবেই। এ প্রেক্ষিতে আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করতে আরও একাধিক বৈঠকের প্রয়োজন হতে পারে।
সূত্রমতে, দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত রেখে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করার লক্ষ্যে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সুপারিশ মোতাবেক ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৪৭’-এর ৪(৬) ও অন্যান্য ধারার বাধ্যবাধকতার আলোকে গাইড-লাইনের পরিবর্তে বিধিমালা প্রণয়নের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বৈঠকে এ বিষয়টিও আলোচনা করা হয়েছে। প্রচলিত বিধান অনুযায়ী, স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ঢালাওভাবে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ নেই। তবে ‘কেইস টু কেইস’ ভিত্তিতে বিষয়টি বিবেচনা করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে সরকারের নীতিগত সম্মতি রয়েছে। বর্তমানে বিদেশে ইক্যুইটি বিনিয়োগের আবেদন দিন দিন বাড়ছে। তবে এ ক্ষেত্রে বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছিল যে, দেশীয় উদ্যোক্তাদের বিদেশে ইক্যুইটি বিনিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদনে চারটি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া জরুরী। এগুলো হচ্ছেÑবিনিয়োগের উদ্দেশ্যে প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা; ওই বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত উপার্জন ও মূল বিনিয়োগকৃত অর্থ দেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিশ্চিত করা; প্রস্তাবিত খাতে অর্থ বিনিয়োগ করা হলে এতে দেশ অধিকতর লাভবান হবে কি নাÑতা বিবেচনা করা এবং বিদেশে মূলধন বিনিয়োগের ফলে সেখানে এ দেশীয় কর্মসংস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করা। এছাড়া বৈদেশিক রিজার্ভ পরিস্থিতি, বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে ভারসাম্য, জিডিপির কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থানীয় বিনিয়োগ বাড়ানো ইত্যাদি বিষয়ও পর্যালোচনা করা দরকার। রিজার্ভের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, বিদেশে ইক্যুইটি বিনিয়োগের প্রস্তাবের ক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য বিষয় হলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি। বর্তমানের রিজার্ভ দ্বারা ৭-৮ মাসের পণ্য ও সেবা আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হলেও বিদেশে ইক্যুইটি বিনিয়োগের প্রস্তাব ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করা হলে রিজার্ভের ওপর চাপ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। জিডিপির কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জনে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের পরিমাণ জিডিপির ন্যূনতম ৩২ শতাংশ হওয়া উচিত। এ প্রেক্ষিতে স্থানীয় বিনিয়োগ উৎসাহিত না করে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান যথাযথ হবে কি নাÑতা সতর্ক বিবেচনার দাবি রাখে। রেজা