বন্যায় চড়া রাজধানীর কাঁচাবাজার শাক সবজি ও চালের দাম বেড়েছে
ইয়াসিন আরাফাত : রাজধানীর বাজারগুলোতে হু হু করে বাড়ছে সবজির দাম। দেশের একটি বড় অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় নষ্ট হয়েছে সবজি ক্ষেত। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব সবজির দাম কেজিতে গড়ে ১০ টাকা বেড়েছে। মঙ্গলবার ঢাকার খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ৬০ টাকার নিচে তেমন কোনো সবজি নেই। কিছু কিছু সবজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। কাঁচা মরিচের কেজি ১০০ টাকার উপরে। এছাড়া মাছ, মাংসসহ মসলার দাম অপরিবর্তিত থাকলেও কিছুটা কমেছে ডালের দাম।
মঙ্গলবার রায়ের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি মাঝারি আকারের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এক কেজি বেগুন ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০, করলা ৮০, পটল ৭০, ঢেড়শ ৬০, বরবটি ৭০, কাঁচা মরিচ ১৩০, ধুন্দুল ৫০, কাঠকচু ৪০ ও টমেটো ১২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি ডালের দাম কিছুটা কমেছে জানিয়ে বিক্রেতারা বলেন, মাঝারি দানার ভারতীয় মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকায়, যা ১০ দিন আগেও ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হত। দেশি ছোট দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১১০ টাকায়। এটাও দুই সপ্তাহ আগে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
এদিকে খুচরা দোকানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের পর রসুনের দাম কেজিতে অন্তত ১০ টাকা করে কমেছে, বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকায়। আদার দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। ঈদের মওসুমে আদার কেজি ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। পাইকারিতে হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন সেই আদা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৮০ টাকায়।
ঝিগাতলা কাচাবাজারের মুদি দোকানি আব্দুস সামাদ জানান, ঈদের পর সব ধরনের চাল কেজিতে ২ টাকা করে বা বস্তায় একশ টাকা করে বেড়েছে। এখন লতা চাল প্রতি কেজি ৫২ টাকা, মিনিকেট ৫৫, বিআর আটাশ ৪৫, স্বর্ণা চাল ৪০, নাজিরশাইল ৫৬ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। সুগন্ধি চালের দাম কিছুটা কমে এসেছে। খুচরায় সুগন্ধি চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায়, যা এক মাস আগেও ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
কারওয়ান বাজারে চালের পাইকারি দোকানদাররা জানান, দাম বাড়ার পর এখন বিআর আটাশের ৫০ কেজির বস্তা ২২৫০ টাকা হয়েছে। নাজিরশাইলের বস্তা ২৮০০ টাকা, বাস ফুল চাল প্রতি বস্তা ২৭৫০ টাকা এবং মিনিকেট প্রতি বস্তা ২৪০০ থেকে ২৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা শহীদুল আলমসহ অন্যান্য বিক্রেতারা জানান, দেশের একটি বড় অঞ্চল বন্যায় জমির সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়েছে, যার ফলে বিভিন্ন জেলা থেকে বাড়তি দামে শাক-সবজি আমদানি করতে হচ্ছে। আগে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও সাভারসহ ঢাকার আশাপাশের এলাকাগুলো থেকে সবজির সরবরাহ ছিল। এসব এলাকার সবজি এখন তেমন আসছে না। মাগুরা, মেহেরপুর, যশোরসহ অন্যান্য উঁচু এলাকা যেখানে বন্যার পানি উঠেনি, ওই সব এলাকা থেকে এখন সবজি আসছে ঢাকায়। সরবরাহ কমে যাওয়া ও পরিবহন খরচ বেশি পড়ায় দীর্ঘদিন ধরে মালের দাম বাড়তি।
এদিকে রাজধানীর ফলের দোকান গুলো ঘুড়ে দেখা গেছে, কোভিডের প্রকোপের মধ্যে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া মাল্টা ও কমলা লেবুর দাম কিছুটা কমেছে। তুলনামূলক কম দামে মিলছে আপেলও। তবে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোভিড প্রকোপের শুরুতে মাল্টা, কমলা লেবু, আপেল, আঙুরের আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে দাম বেড়ে যায়। এখন এসব ফলের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। এ কারণে দামও কমেছে। মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা ফল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি কেজি মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে। যা ঈদের আগে ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় ওঠা কমলা লেবু এখন ১৬০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। সবুজ আপেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, যা করোনার প্রকোপে ১৮০ থেকে ২৩০ টাকায় উঠেছিল। চায়না আপেল বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১৩০ টাকা, যা আগে ছিল ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি। সাউথ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের আপেল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে, যা আগে ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। এদিকে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে আমের দাম। বাজারে এখন শুধু আম্রপালি ও আশ্বিনি আম পাওয়া যাচ্ছে। ঈদের আগে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আশ্বিনি আম এখন একশ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। বাজার ও মান ভেদে আশ্বিনি আম কেজি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আম্রপালি এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি।এদিকে আপেল, মাল্টা, কমলা লেবু, আমের পাশাপাশি বাজারে এখন লটকন, পেয়ারা, আনার, ড্রাগন ফলের সরবরাহ রয়েছে বেশ। ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজির মধ্যে ভালো মানের লটকন পাওয়া যাচ্ছে। আনার বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। পেয়ারা মানভেদে ৪০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।