দেশে বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার কাঁঠাল অপচয় হয়
মতিনুজ্জামান মিটু : দেশে কাঠাঁলের সংগ্রহোত্তর ক্ষতির পরিমান ২৫ থেকে ৪৫ ভাগ। কখনও কখনও এই অপচয়ের পরিমান অনেক বেশী হয়ে থাকে। প্রক্রিয়াজাতকরা প্রযুক্তিই অপচয় রোধের এই অপচয় রোধের হাতিয়ার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় কৃষক তার ন্যায্য দাম না পাওয়ায় উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। অনেক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় যা কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে পরিচালিত পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউ ও নিউভিশন সল্যুশন লিমিটেড, ঢাকার যৌথভাবে পরিচালিত এক গবেষণা জরিপেও চিত্রটি ফুটে উঠেছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পোস্টহারভস্ট টেকনোলোজি বিভাগের উদ্ধৃতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও খাদ্য প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষক ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী জানান, কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। পুষ্টিগুণে ভরপুর তাইতো এটি ফলের মধ্যে গুনের রাজা হিসেবে স্বীকৃত। কাঁঠালে আছে অধিক পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও বিভিন্ন ভিটামিন যা মানবদেহের জন্য বিশেষ দরকার। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা কাঁঠালে ১.৮ গ্রাম, কাঁচা কাঁঠালে ২০৬ গ্রাম ও কাঁঠালের বীজে ৬.৬ গ্রাম আমিষ পাওয়া যায়। কাঁচা কাঁঠাল রোগ ব্যাধি উপশমে যেমন কার্যকর, অন্যদিকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয় অনেকগুন।
দেশের প্রায় সব এলাকায় কম বেশি কাঁঠাল উৎপাদিত হয়ে থাকে। অঞ্চলগুলোর মধ্যে গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, যশোর, খুলনা, সুনামগঞ্জ, পার্বত্য চট্টগ্রামে উল্লেখযোগ্য পরিমান ও উৎকৃষ্টমানের কাঁঠাল উৎপন্ন হয়ে থাকে।
পাকা কাঁঠাল খাওয়ার প্রবণতা আমাদের দেশে খুব বেশি। গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার ও মাওনা এলাকার কৃষক, ব্যবসায়ী ও আড়ৎদারদের সঙ্গে কথা বলে ড. মো. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী জানান, কাঁঠালকে শুধুমাত্র পাকা ফল হিসেবে খাওয়া হয়। এটি যখন পাকঁতে শুরু করে তখন একসঙ্গে বেশির ভাগ কাঁঠালই পেকে যায়। ফলে এ সময় গাছ হতে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ কাঁঠাল প্রাকৃতিক ভাবে পড়ে যায় যা খাওয়ার উপযোগী থাকে না। এক্ষেত্রে ব্যাপক কাঁঠাল নষ্ট হয়ে থাকে। কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহার বাড়াতে এবং অপচয় কমাতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কেজিএফ এর অর্থায়নে পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগ ও নিউভিশন সলিউ্যশন লিমিটেড যৌথভাবে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পের মুল উদ্দেশ্যই হলো- কাঁঠালের উৎপাদন, সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন বিষয়কে সম্প্রসারিত করার মাধ্যমে অপচয় রোধ করা। প্রকল্পটি দেশের ৪ টি বিভাগের (ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও চট্রগ্রাম) ৮ টি জেলায় সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা, বিপণন ব্যবস্থা, গ্রাহকের চাহিদা ও প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে মূল্য সংযোজনসহ (ভ্যালু এ্যাডিশন) উৎপাদনকারীর জন্য টেকসই বিপণন মডেল প্রস্তÍত করা এবং কাঁঠালের (সতেজ ও প্রক্রিয়াজাতকৃত) বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীর কৌশলগত বিপণন পরিকল্পনা প্রণয়ন নিয়েও কাজ করবে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এর তথ্য মোতাবেক বিশ্বে বছরে প্রায় ৩৭ লাখ টন কাঁঠাল উৎপাদিত হয় যার অধিকাংশই উৎপাদিত হয় ভারতে (১৮ লাখ টন)। এর পরের অবস্থান বাংলাদেশ (১০ লাখ টন)। চীন উৎপাদনে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড। পুষ্টি বিবেচনায় চীন, জাপান, মালয়েশিয়াসহ পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশই কাঁঠালকে প্রক্রিয়াজাতকরণ কাজে ব্যবহার করায় উৎপাদন চলমান রাখতে বিভিন্ন দেশ হতে কাঁঠাল আমদানিও করছে। এ ক্ষেত্রে উৎকৃষ্টমানের ও সুনির্দিষ্ট জাত উদ্ভাবন এবং সঠিক পরিপক্কতা নির্বাচনের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানীর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে যা দেশের কৃষক ও উদ্যোক্তাকে উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করবে।
দেশে উৎপাদিত কাঁঠালের খুব অল্প পরিমানে বিদেশে রপ্তানী হয় এবং এর ক্রেতা অধিকাংশই প্রবাসী বাংলাদেশী। ডিএই-এর তথ্য মতে ২০১৬-১৭ সালে ৩৯৩ টন এবং ২০১৭-১৮ সালের জুন পর্যন্ত রফতানি ছিল ৭০০ টন। আমাদের দেশের কাঁঠালের মধ্যে হবিগঞ্জের বড় ও ভালমানের কাঁঠাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইংল্যান্ড, আমেরিকা ও মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে কাতার, ওমান, বাহরাইন, সৌদি আরব, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। সম্পাদনা : শোভন দত্ত