ঘন চিনি পুরুষত্বহানি, মূত্রাশয়ে ক্যান্সারের জন্যে দায়ী
মতিনুজ্জামান মিটু : দেশে ঘন চিনি বা সোডিয়াম সাইক্লামেট দিয়ে খাদ্য তৈরিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নিয়মিত মার্কেট মনিটরিং এর অভাবে এধরনের নিষিদ্ধ উপকরণ এখনও খাবারে মিলছে। ফলে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ছে। দৈনিক একজন মানুষের ৫ চামচের বেশি চিনি খাওয়া উচিত নয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিনি খাওয়ার পরিমাণ ধীরে ধীরে কমাতে হবে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পুষ্টি ইউনিটের পরিচালক ড. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সোডিয়াম সাইক্লামেটকে অনিরাপদ চিহ্নিত করে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। দামে সস্তা এবং সুক্রোজের চেয়ে ৩০ থেকে ৫০ গুন বেশি মিষ্টি হয়। এ কারণে চিনি তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি লাভের আশায় অসাধু উপায়ে সোডিয়াম সাইক্লামেট মিশাচ্ছে। বিএআরসির পুষ্টি ইউনিটের গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায়, পরিমাণে কম হলেও চিনিতে সোডিয়াম সাইক্লাইমেটের উপস্থিতি রয়েছে।
খাদ্যদ্রব্যে সোডিয়াম সাইক্লামেটের ব্যবহার সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণায় মিশ্র ফলাফল পরিলক্ষিত হয়। কিছু গবেষণায় প্রাণি ভ্রুণের ক্ষতি হয় বলে দাবি করা হয়। এছাড়া সাইক্লামেট কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম, মানসিক স্বাস্থ্য অবনতিসহ পরিপাকতন্ত্রে রোগ বা সংক্রমণ তৈরিতে ভূমিকা রাখে। তবে বর্তমানে নির্দিষ্টভাবে সাইক্লামেটের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না থাকলেও কৃত্রিমভাবে তৈরি এসব কৃত্রিম চিনি মানব দেহের বিভিন্নভাবে ক্ষতি করে। এতে দৃষ্টিশক্তি লোপ, নিদ্রাহীনতা, বমি বমি ভাব পেট ও অস্তি সন্ধিতে ব্যাথা হৃদপিন্ডের গতি উঠানামা, বিষণœতা, স্মরণশক্তি কমে যাওয়াসহ মস্তিস্কের ক্যান্সার হয়ে থাকে। সাদা চিনি অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে কেবল ওজন এবং শর্করা বাড়ে তাই নয়, চর্বিও বাড়ে। ফলে দেখা দেয় স্থ’ূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ফ্যাটি লিভারসহ অনেক কিছু। আবার কারও কারো মতে প্রক্রিয়াজাত বা সাদা চিনির চেয়ে ব্রাউন সুগার স্বাস্থ্যকর। আসলে চিনি তা সে সাদা বা ব্রাউন যাই হোক না কেন, কোনটিই স্বাস্থ্যকর নয়। তবে দেশীয় চিনিকলগুলোতে আখ থেকে তৈরি চিনিতে তুলনামূলকভাবে খনিজ উপাদান বেশি থাকে। চিনি বা টেবিল সুগার প্রধানত আখ বা সুগারবিট হতে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। চিনির মূল উপাদান হলো সুক্রোজ। অন্যদিকে সোডিয়াম সাইক্লামেট হলো এক ধরনের আর্টিফিসিয়াল সুইটনার। যা সাধারণ চিনির চেয়ে ৩০ থেকে ৫০ গুণ বেশি মিষ্টিস্বাদযুক্ত ও বিশ্বে সবচেয়ে কম দামী একটি কৃত্রিম মিষ্টিবর্ধক। সোডিয়াম সাইক্লাইমেট ঘন চিনি নামে পরিচিত। বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবার বিশেষত বেক্ড আইটেম ও বিাভন্ন ধরনের ড্রিংক্স তৈরিতে বেশি ব্যবহার করা হয়। খাদ্য দ্রব্য তৈরিতে ১০ ভাগ স্যাকারিনের সঙ্গে ১ ভাগ সোডিয়াম সাইক্লামেট মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়। স্যাকারিন আবিস্কারের ৫০ বছর পর ১৯৩৭ সালে দৈবক্রমে সাইক্লামেট আবিস্কৃত হয়। অন্যান্য কৃত্রিম মিষ্টিবর্ধকের চেয়ে দামে কম, তাপে স্থিতিশীল ও দীর্ঘ স্থায়ীত্বের গুণাবালী থাকা সত্ত্বেও এর ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে এফডিএ ১৯৬৯ সালে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তবে ইউরোপয়িান ইউনিয়নের দেশগুলোসহ ৮০টির বেশি দেশ সোডিয়াম সাইক্লামেটকে নিরাপদ হিসেবে গণ্য করে।
অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও খাদ্য দ্রব্যে সোভিয়েট সাইক্লামেটের ব্যবহার নিষিদ্ধ। বিএআরসির পুষ্টি ইউনিট এ দেশের বাজাওে পাওয়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এবং নন ব্র্যান্ডের চিনির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। গবেষণা কার্যক্রমের আওতায় রাজধানীর মতিঝিল, পুরান ঢাকা, ক্যানটনমেন্ট, গুলশান, বাড্ডা, বনানী, মহাখালী, উত্তরা, টঙ্গী ও সাভার থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চিনির নমুনা এবং মিরপুর কাঁচাবাজার, কচুক্ষেত বাজার, কারওয়ান বাজার ও সদরঘাট এলাকা থেকে খোলা চিনির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নমুনা সংগ্রহের পর প্রত্যকটি নমুনাকে সনাক্তকারি নাম্বার বা কোড দিয়ে উপযুক্ত তাপমাত্রায় ফুড গ্রেড প্লাস্টিক ব্যাগে সংরক্ষণ করা হয়। যা পরে চিনির নমুনাতে সোডিয়াম সাইক্লামেটের উপস্থিতি নির্ণয়ে সিংগাপুরের অ্যাক্রিডেটেট ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়ে ফলাফল বিশ্লেষণ করা হয়। পরীক্ষাকালে স্থানীয় বাজার হতে ১২টি ব্র্যান্ডের অর্থাৎ নাম্বার ওয়ান, সুগারক্যান, তীর, ফ্রেশ, রিফাইনসুগার, এসিআই, ইগলু, সিসি, স্বচ্ছ, দেশি, হেলথ কেয়ার, ও স্বপ্ন সহ খোলা বাজার হতে সংগ্রহ করা ৪টি চিনির নমুনার নমুনার সবকটিতে সোডিয়াম সাইক্লামেটের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়।