এবার এলপিজির দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে সরকার, অক্টোবরের মধ্যেই সিদ্ধান্ত
শাহীন চৌধুরী : দেশে দিন দিন এলপি গ্যাসের চাহিদা বাড়লেও এ নিয়ে যেমন কোন নীতিমালা তেমনই এর দামের ক্ষেত্রেও নেই কোন বাধাধরা নিয়ম। ফলে বেসরকারি কোম্পানিগুলো ইচ্ছে মত গ্রাহকদের কাছ থেকে এলপি গ্যাসের দাম নিচ্ছে। এ কারণে দীর্ঘ সময় যাবৎ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে দেয়ার জন্য ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বিইআরসিকে চিঠি দেয়া হয়েছে। জ্বালানি সচিব আনিসুর রহমান বলেন, এবার বিইআরসি এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে দেবে। অন্যান্য গ্যাসের মত এলপি গ্যাসেরও নির্ধারিত রেট থাকবে তার বাইরে কেউ দাম নিলে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
এ প্রসঙ্গে বিইআরসির সদস্য মকবুল ই এলাহী বলেন, আমরা মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পেয়েছি। কমিশনের পরবর্তী বৈঠকেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। এর আগে কেন দাম নির্ধারণ করে দেননি এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমাদের গোচরে ছিল না বা মন্ত্রণালয়েরও এ ব্যাপারে কোনো গাইড লাইন ছিল না এখন যেহেতু মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে তাই আমরা ব্যবস্থা নেব। বিষয়টি নিয়ে ইতিপূর্বে হাইকোর্টে দুই দফা রিট হলেও তাতে কর্ণপাত করেনি বিইআরসি। এবার মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে তারা নড়েচড়ে বসেছে।
সূত্রমতে, আগামী অক্টোবরের মধ্যেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সরকারের এই উদ্যোগকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরাও স্বাগত জানিয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ গ্রাহকরা এতে বেশ খুশি। বাসাবাবাড়িতে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় ব্যাপক ভাবে বেড়েছে এলপিজির চাহিদা। বর্তমানে দেশে এলপিজির চাহিদা প্রায় দশ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদার কারণে এর দামও নিচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানি ইচ্ছে মত। ইতিপূর্বে ২০ কেজির একটি এলপিজি সিলিন্ডার ১২শ থেখে ১৩শ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অবশ্য করোনার কারণে এখন তা নেমে এসেছে সাড়ে আটশ থেকে নয়শ টাকায়। সরকার আগামী ২ বছরের মধ্যে ৭০ শতাংশ বাসাবাড়িকে এলপিজির আওতায় আনতে চাইলেও এর দাম ও নিরাপত্তার মান নিয়ে বিতর্কের কারণেই তা সম্ভব হচ্ছে না। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার নীতিমালা তৈরির কথা বলা হলেও তা শুধু প্রতিশ্রুতিতেই আটকে আছে। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, নীতিমালা তৈরিতে আরও কিছু সময় লাগবে। আর সুষ্ঠু নীতিমালার মাধ্যমে বর্তমান বাজারমূল্যের তুলনায় এলপিজির দাম অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি অন্যান্য জ্বালানির মতো আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজির দাম কমলেও দেশের বাজারে নেই তার সমান প্রভাব। ২০১৩ সালের জুনে এলপিজি তৈরির উপাদান বিউটেন ও প্রোপেনের টনপ্রতি দাম ছিল ৭৭০ ও ৭৪৫ ডলার। বর্তমানে তা নেমে এসেছে যথাক্রমে ৩৯০ ও ৩৮৫ ডলারে। প্রতিবেশি দেশ ভারতের কলকাতায় ১৪ কেজি ২০০ গ্রাম এলপি গ্যাসের দাম পড়ে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৪৭ টাকা। অথচ ঢাকায় তার দাম দ্বিগুনেরও বেশি।
সরকার এলপিজির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দিলেও এখনো এর দাম সাধারণের সাধ্যের বাইরে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলপিজিকে জনপ্রিয় করতে প্রাধান্য দিতে হবে ভোক্তাস্বার্থ। সেক্ষেত্রে দাম যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার বিকল্প নেই। গত জানুয়ারিতে এক প্রজ্ঞাপনে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে এলপিজির দাম নির্ধারণের পদ্ধতি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছিল। আর ফেব্রুয়ারিতে ২ মাসের মধ্যে নীতিমালা তৈরির কথা জানিয়েছিলেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু এখনো দুটির একটিও হয়নি। রেজা