১১ ঝুঁকি ও ২৯টি দুর্বলতা নিয়ে শেষ হয়েছে এসজিএমপি প্রকল্প দেশের করদাতাদের অতি গোপনীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভিয়েতনামের হাতে
সাইদ রিপন : কর বিভাগকে পূর্ণাঙ্গ, স্বয়ংসম্পূর্ণ, আধুনিক, শক্তিশালী, জবাবদিতিমূলক ও প্রযুক্তি নির্ভর বিভাগ হিসেবে গড়ে তুলতে ‘স্ট্রেংদেনিং গভর্নেন্স ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট (এসজিএমপি) (প্রথম সংশোধিত)’ বাস্তবায়ন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ৭৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে জুলাই ২০১১ থেকে ডিসেম্বর ২০১৩ সালে বাস্তবায়নের লক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ৭৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ডিসেম্বর ২০১৫ সালে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এরপর ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে তিনবার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৫৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় করে জুন ২০১৮ সালে শেষ করে এনবিআর। পরিকল্পনা কশিনের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) চলতি বছরের মে মাসে প্রকল্পটির ওপর প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদন করেছে।
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্ট্রেংদেনিং গভর্নেন্স ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট (এসজিএমপি) প্রকল্পে আওতায় ইন্ট্রিগ্রেটেড ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেমটি এডিবির গাইডলাইন অনুসারে ক্রয়ে সকল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভিয়েতনাম ভিত্তিক এফপিটি ইনফরমেশন সিস্টেম কর্পোরেশন সিস্টেমকে টার্ন কি চুক্তির আওতায় ৫১ কোটি ৩১ লাখ টাকা কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ি কাজ সমাপ্তির তারিখ ডিসেম্বর ২০১৫ উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে নভেম্বর ২০১৬ সালে সিস্টেম ডেভেলপমেন্টের কাজ শেষ হয়। বাংলাদেশ ইন্ট্রিগ্রেটেড ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম বা বাইট্যাক্স সফটওয়্যারটি এসএপি ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্স এবং রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। আয়কর সংক্রান্ত করদাতার তথ্য রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ, সংবেদনশীল এবং গোপনীয় তথ্য। আইন দ্বারা এই তথ্যের গোপনীয়তার সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে এফপিটি ইনফরমেশন সিস্টেম কর্পোরেশন এবং এর টেকনিক্যাল টীম রাষ্ট্রের এই অতি গোপনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভিয়েতনাম থেকে এক্সেস করতে পারে। এটি রাষ্ট্রের গোপনীয় তথ্য নিরাপত্তার হুমকি স্বরূপ, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
রিপোর্টে আইএমইডি উল্লেখ করেছে, প্রকল্পের সার্বিক পর্যবেক্ষণে চিহ্নিত সমস্যার মধ্যে মূল সমস্যা হচ্ছে করদাতাদের মাঝে অনলাইন কার্যক্রমের গ্রহণযোগ্যতা না পাওয়া। সর্বশেষ কর বছরে কাগজে রিটার্ন দাখিলকৃত করদাতার সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ কিন্তু অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছে মাত্র পাঁচ হাজার করদাতা। বর্তমানে অনলাইনে কর প্রদান সিস্টেমটি করদাতাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা না পাওয়ায় আউটসোসিংয়ের মাধ্যমে ব্যক্তি করদাতাদের আয়কর রিটার্ন অনলাইনে আপলোড করা হচ্ছে। প্রকল্পটি ২০১৮ সালে শেষ হলেও ভিয়েতনাম ভিত্তিক আইটি প্রতিষ্ঠান এফপিটি ইনফরমেশন সিস্টেম কর্পোরেশন সম্পূর্ণ সিস্টেমটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে বুঝিয়ে দেয়নি। এক্ষেত্রে সিস্টেমটি পূর্ণাঙ্গ হ্যান্ডওভার করার পূর্বেই সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
প্রকল্পের ২৯টি দুর্বল দিকের গুরুত্বপূর্ণগুলো হচ্ছে, নভেম্বর ২০১৬ সালে অনলাইনে কর রিটার্ন দাখিল শুরু করা হলেও অনলাইন প্রক্রিয়াটি করদাতাদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়িত কর রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়াতে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যার ফলে কর প্রদানকরীরা অনলাইনে কর দাখিলে উৎসাহিত হচ্ছেন না। মোট করদাতার শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ অনলাইনে কর রিটার্ন দাখিল করছেন। প্রকল্পটি ২০১৮ সালে শেষ হলেও ভিয়েতনাম ভিত্তিক আইটি প্রতিষ্ঠান এফপিটি ইনফরমেশন সিস্টেম কর্পোরেশন সম্পূর্ণ বাইট্যাক্স সিস্টেমটি এনবিআরকে বুঝিয়ে দেয়নি। করদাতাদের অনলাইন ট্যাক্স হিসাব প্রস্তুত সম্পর্কে অবগত করা, করদাতারা সিস্টেমটি কিভাবে ব্যবহার করবে তা শেখানো, গ্রহকের বিশ্বাস এবং আস্থা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। প্রকল্পটিতে রিয়েল টাইমে কর পরিশোধের সুযোগ না থাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরেও ঘরে বসেই করদাতারা সহজে কর পরিশোধ করতে পারছে না। এ প্রকল্পের ১১টি ঝুঁকির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, দীর্ঘ মেয়াদী টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ না দেওয়ার ফলে সিস্টেম পরিচালনায় সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। সফটওয়্যার ডেভেলপার কোম্পানির সাথে সার্ভিস এগ্রিমেন্ট ২০১৯ সালে শেষ হয়ে গিয়েছে। পরবর্তীতে অনলাইন কার্যক্রমটি কিভাবে চলবে এবং কোন সমস্যা হলে সমাধানে তাদের কি ভূমিকা থাকবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে স্টোরেজ ৮টিবি স্পেস এর মধ্যে ৫টিবি স্পেস পূরণ হয়ে গেছে। সার্ভারের স্পেস পূর্ণ হয়ে গেলে যেকোন সময় সার্ভার ডাউন হয়ে যেতে পারে। এতে করদাতার কর রিটার্ন দাখিলের তথ্য বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে।