বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যবসাসহায়ক পরিবেশের উন্নতি ও কর-কাঠামোর সংস্কার চান বিদেশি উদ্যোক্তারা
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : শনিবার ‘ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’ (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের বৈদেশিক বিনিয়োগের গতিপ্রবাহে কোভিড-১৯-এর প্রভাব : সমস্যা ও উত্তরণ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন ঢাকাস্থ আমেরিকা ও জাপান দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধে পলিসি এক্সচেঞ্জ-এর চেয়ারম্যান ড. এম. মাশরুর রিয়াজ বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে নতুন পণ্য উৎপাদন, উদ্ভাবন, অবকাঠামো, বাজার ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষমতা বাড়াতে আরও বেশি মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। এছাড়া প্রত্যাশিত বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে কমপ্লায়েন্স, দক্ষ মানবসম্পদ, পণ্য পরিবহনে সহজতর প্রক্রিয়া, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নীতিমালা সমূহের মধ্যে সমন্বয় এবং দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যকার সমন্বয় বাড়ানো ইত্যাদি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী বিনিয়োগ ও শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, হ্রাসকৃত করের হার বিনিয়োগকারীদের নতুন বিনিয়োগে উদ্ভুদ্ধ করে। অন্যান্য দেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কর কাঠামাকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সরকার নীতি সংষ্কারের ওপর কাজ করে যাচ্ছে, এবং নীতি সংষ্কারের এ উদ্যোগ দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ’ (বেজা)-এর চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, বেজা, বিডা ও হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষকে আরো ক্ষমতায়ন করা দরকার। এছাড়া নীতিমালার সংষ্কার ও বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো একান্ত আবশ্যক। তিনি জানান, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাতে বিনিয়োগ করলে উদ্যোক্তারা ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা পাবেন। এছাড়া বেজা বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত কম মূল্যে জমি প্রদান করছে, যা ভিয়েতনামের তুলনায় অনেক কম। ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন জোঅ্যান ওয়াগনার বলেন, কোভিড-১৯-এর কারণে ডিজিটাল অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে বিশ^বাসীর কাছে তুলে ধরতে হবে। ব্যবসা পরিচালনার সূচকে উন্নতি করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে। এছাড়া বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
তিনি জানান, বাংলাদেশের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে আমেরিকান কোম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, বায়ো-টেকনোলোজি প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে কাজ করতে পারে। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি, পর্যটন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ওষুধ, ভ্যাহিকেল অ্যাসেম্বেলিং ও স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত।
ঢাকাস্থ জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নায়োকি বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে ট্যাক্সেশন, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স ও ফরেন এক্সচেঞ্জ রিফর্ম অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী বৈদেশিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা পরিচালনায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলেই ভবিষ্যতে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও আরো বেশি হারে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করা সম্ভব। তিনি জানান, জাপানি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। বঙ্গোপসাগর ভিত্তিক অর্থনীতি ও এশিায় অঞ্চলে আঞ্চলিক যোগাযোগ স্থাপনে জাপানের পক্ষ হতে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
জেট্রোর বাংলাদেশ আবাসিক প্রতিনিধি ইউজি এন্ডো বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশকে কর নীতিমালার সংষ্কার ও আধুনিকায়ন, নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজতরকরণসহ সার্বিকভাবে বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের বাণিজ্য পরিবেশের উন্নয়ন হলে স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয় হ্রাস পাবে। ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে সময়োপযোগী সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন ও সংস্কার, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি ও স্থানীয় উদ্যোক্তাদের আরো শক্তিশালী করতে হবে। এছাড়া বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন, সরকারি-বেসরকারি যোগাযোগ বাড়ানো, স্থানান্তরিত বিনিয়োগ আকর্ষণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, রপ্তানির পণ্যের বহুমুখীকরণ ও বাজার সম্প্রসারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রেজা