সরকারি জমি ক্রয়ের ২৯ বছর পর রেজিস্ট্রি দলিল পাচ্ছেন ক্রেতা
সোহেল রহমান : বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, নীলফামারী জেলার সাবেক ‘জুট ট্রেডিং কর্পোরেশন’ (জেটিসি) পরবর্তীতে ‘বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশন’ (বিজেসি) (বর্তমানে বিলুপ্ত)-এর ‘মেসার্স হৃদকরণ’ নামক দশমিক ২৩ একর (২৩ শতাংশ) সম্পত্তিটি ১৯৬৭ সালে গেজেট মূলে ও ১৯৭৪ সালে দলিল মূলে মালিকানা লাভ করে সাবেক ‘জেটিসি’। সম্পত্তিটি বিক্রির লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ২৩ এপ্রিল দুটি জাতীয় দৈনিকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ১ লাখ টাকা মূল্যে জমিটি ক্রয়ের জন্য মনোনীত হন ‘মেসার্স নর্দান ট্রেডার্স’-এর তৎকালীন স্বত্বাধিকারী গোপাল মহেশ্বরী। তার অনুকূলে বিক্রয়াদেশ জারি করা হয় এবং পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমির মূল্য পরিশোধ করেন ক্রেতা।
পরবর্তীতে ‘জেটিসি’র পক্ষ থেকে রংপুর জোনের আঞ্চলিক কর্মকর্তাকে ক্রেতা বরাবর জমির দখল বুঝিয়ে দিতে বলা হলে তখন দেখা যায় যে, দশমিক ২৩ একর জমির মধ্যে দশমিক ১৪ একর সম্পত্তির মালিক হচ্ছেন জনৈক কাজী আবদুল কাদের। মুন্সেফি আদালতে ওই পরিমাণ জমি দাবি করে তিনি একটি মামলাও (মামলা নং ৮১/৮৪) করেছেন। এ মামলায় নিম্ন আদালত থেকে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে ‘জেটিসি’ (পরবর্তীতে ‘বিজেসি’) হেরে যায় এবং আদালতের রায়ের মাধ্যমে কাজী আবদুল কাদের তার নামে দশমিক ১৪ একর সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করে দখলে নিয়ে নেন। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সম্পত্তির ক্রয়মূল্য পরিশোধের পর থেকেই ‘মেসার্স নর্দান ট্রেডার্স’ জমি রেজিস্ট্রি ও দখল বুঝিয়ে দেয়ার জন্য ‘জেটিসি’ (পরবর্তীতে ‘বিজেসি’) বরাবর দফায় দফায় আবেদন করতে থাকে। কিন্তু সম্পত্তিটি অর্পিত সম্পত্তির ‘খ’ তফসিলভুক্ত হওয়ায় ও মামলা থাকায় এবং ক্রেতা গোপাল মহেশ্বরী’র মৃত্যুজনিত কারণে দীর্ঘদিন এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ২০১৩ সালে সম্পত্তিটি ‘খ’ তফসিল থেকে অবমুক্ত হয় এবং দশমিক ২৩ একর জমি থেকে দশমিক ১৪ একর বাদ দিয়ে দশমিক ০৯ একর জমি বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে সচিবের নামে নামজারি করা রয়েছে।
পরবর্তীতে মূল ক্রেতার উত্তরাধিকারী হিসেবে গোপাল মহেশ্বরীর পুত্র অশোক মহেশ্বরী জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়ার জন্য ২০১৫ সালে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন। এ ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে প্রদত্ত এক হলফনামায় তিনি জানান যে, বিদ্যমান দশমিক ০৯ একর জমি তার নামে রেজিস্ট্রি করে দেয়া হলে অবশিষ্ট দশমিক ১৪ একর জমি বা পূর্বে পরিশোধিত অর্থের ওপর তার আর কোনো দাবি থাকবে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত কর্তৃক নিষ্পত্তিকৃত রায়ের ভিত্তিতে বিদ্যমান দশমিক ০৯ একর জমি অশোক মহেশ্বরী’র নামে রেজিস্ট্রি করে দেয়ার লক্ষ্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সম্প্রতি নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’।
এদিকে বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি কিংবা শিল্প-কারখানার অব্যবহৃত জমি বিক্রির পরিবর্তে লীজ প্রদানের বিষয়ে সরকারের এক প্রকার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এর আলোকে ইতিপূর্বে নওগাঁ জেলা সদরে অবস্থিত সাবেক জুট বোর্ডের বিক্রিত সম্পত্তি এবং ভালিকা উলেন মিলের ৩ দশমিক ৯০ একর বিক্রিত সম্পত্তির বিক্রি বাতিল করে ক্রেতা বরাবর পরিশোধিত অর্থ ফেরত প্রদানের নির্দেশ দিয়েছিল ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’। রেজা