দেশে নারীর তুলনায় পুরুষের মোবাইল ব্যবহার দ্বিগুন : জরিপ
শোভন দত্ত : দেশের ৮০ শতাংশ ছেলের মোবাইল থাকলেও মেয়েদের মাত্র ৪০ শতাংশের হাতে এই প্রযুক্তি আছে বলে একটি জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেম পরিচালিত এই জরিপের ফলাফল শনিবার একটি ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় উপস্থাপন করা হয়।
সানেম ও অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘জেন্ডার অ্যান্ড ইয়ুথ ইনক্লুসিভনেস ইন টেকনোলজি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সভায় সানেমের রিসার্চ ইকোনমিস্ট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক মাহতাব উদ্দিন এই জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, দেশে তরুণদের মধ্যে ৮০ শতাংশ ছেলের মোবাইল ফোন থাকলেও মেয়েদের মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশের মোবাইল ফোন আছে। সবচেয়ে বেশি আয় করে যে ১০ শতাংশ পরিবার, সেখানে ৯২ শতাংশ তরুণের মোবাইল ফোন আছে। আর সবচেয়ে কম আয় করে যে ১০ শতাংশ, সেখানে ৭২ শতাংশ তরুণের মোবাইল ফোন আছে।
সবচেয়ে বেশি আয় করা ১০ শতাংশ পরিবারের ৭৩ শতাংশ তরুণীর হাতে মোবাইল ফোন থাকলেও সবচেয়ে কম আয় করা ১০ শতাংশ পরিবারের মাত্র ২৪ শতাংশ তরুণী মোবাইল ফোনের মালিক। দরিদ্র ও স্বচ্ছল উভয় ক্ষেত্রেই নারীর চেয়ে পুরুষ মোবাইল ব্যবহারে এগিয়ে আছে বলে জানান তিনি। কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও বৈষম্য রয়েছে জানিয়ে মাহতাব বলেন, বাংলাদেশে মাত্র ৬ শতাংশ পরিবারের কম্পিউটার আছে। ৪ শতাংশেরও কম নারী কম্পিউটার ব্যবহার করেছেন। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্যও বিদ্যমান। ঢাকা ও চট্টগ্রামে অন্য বিভাগের চেয়ে কম্পিউটার মালিকানা অনেক বেশি।
শহরাঞ্চলে মাত্র ৫০ শতাংশ পরিবারের ইন্টারনেট সুবিধা আছে। গ্রামাঞ্চলে এ সুবিধা আছে মাত্র ৩০ শতাংশ পরিবারের। সারা দেশে মাত্র ১০ শতাংশ নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। অন্যদিকে মোবাইল ইন্টারনেট সেবার দ্রুততার ক্ষেত্রে র্যাংকিংয়ে ১৪৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৩৪। ফলে শুধু ইন্টারনেট সেবা প্রাপ্তিই নয়, সেবার মানও প্রশ্নসাপেক্ষ।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ প্রাপ্তিতে বাংলাদেশ ‘অনেক পিছিয়ে আছে’। বৈষম্য নিরসনে কম্পিউটার বা মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ভ্যাট ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।
দেশের জনসংখ্যার তুলনায় কারিগরি ও প্রযুক্তি শিক্ষার অবকাঠামো অপ্রতুল উল্লেখ করে মাহতাব উদ্দিন বলেন, এ ধরনের শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের চাহিদাও কম। ২০১৯-২০ এ ৬২৪টি সরকারি ও বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিপ্লোমা কোর্সে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার আসন ফাঁকা পড়ে ছিল। অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ফারাহ কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। প্রযুক্তি বিভাজনের মূল কারণ হিসেবে সামাজিক প্রেক্ষাপটে মেয়েদের বিভিন্ন বাধাকে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, সামাজিক নানা সংস্কার এবং রক্ষণশীল মনোভাবের কারণে প্রায়শই নারীদের প্রযুক্তি ব্যবহারে বাধা দেওয়া হয় বা নিরুৎসাহিত করা হয়। অনলাইনে নারীদের নানা হয়রানিরও শিকার হতে হয়। উপযুক্ত অবকাঠামো থাকলেও অনেক সময় নারীদের জন্য এই বাধাগুলো দূর করা যায় না। শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, কারিগরি ও ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ সবার জন্য উন্মুক্ত হতে হবে, বয়সভিত্তিক বাধা থাকা যাবে না। এজন্য সরকার, পেশাজীবী, ছাত্রসহ সব পর্যায়ের সবাইকে উন্মুক্ত মানসিকতা ধারণ করতে হবে। সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, চলমান কোভিড-১৯ সংকটে ডিজিটাল অসমতার বিষয়টি আরও প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। সূচনা বক্তব্যে সানেমের গবেষণা পরিচালক সায়মা হক বিদিশা বলেন, জনমিতির লভ্যাংশের সুবিধা অর্জনের জন্য তরুণ জনগোষ্ঠীর গুণগত মান উন্নয়ন ও তাদের উপযুক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আলোচনায় সরকারের এটুআই কর্মসূচির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নীতি বিষয়ক উপদেষ্টা আনির চৌধুরী কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কথা উলেখ করে বলেন, গত তিন মাসে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষায় সাড়ে চার হাজারেরও বেশি লাইভ ক্লাস নেওয়া হয়েছে। তবুও অন্তর্ভুক্তিতে পিছিয়ে আছে নারী, দরিদ্র, প্রতিবন্ধী, শরণার্থী, বন্যার্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। সূত্র : বিডিনিউজ, বার্তা২৪. জাগোনিউজ।