লোকসানি বৃত্তে বেসিক ব্যাংক, ছয় বছরে হারিয়েছে প্রায় ২,৮১৪ কোটি টাকা
সোহেল রহমান : ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সংঘটিত ঋণ কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়মের ঘানি এখনো টেনে চলেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। ওই সময়ে ব্যাংকটির প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বেরিয়ে যায়। এক সময়ের লাভজনক বেসিক ব্যাংক ২০১৩ সাল থেকে টানা লোকসান দিয়ে আসছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে সম্পাদিত ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি’ (এপিএ) বিবরণী অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ছয়টি অর্থবছরে ব্যাংকটি মোট ২ হাজার ৮১৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যাংকটির লোকসান প্রাক্কলন করা হয়েছে ৬৬০ কোটি টাকা। যদিও চুক্তি অনুযায়ী, আগামী বছর জুন শেষে ব্যাংকটির লোকসান ৩৮০ টাকার মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে।
এদিকে করোনা চলমান পরিস্থিতিতে পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি, সুদ আয় কমে যাওয়া ও অন্যান্য সার্ভিস চার্জ হ্রাস এবং দুই মাসের সুদ স্থগিত রাখা ইত্যাদি কারণে ব্যাংকটির আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩১৯ কোটি টাকা দাঁড়াতে পারে বলে প্রাথমিক প্রাক্কলন করা হয়েছে।
ব্যাংকের নিজস্ব ভাষ্য অনুযায়ী, বেসিক ব্যাংকের প্রধান সমস্যা হচ্ছেÑশ্রেণীকৃত ঋণের আধিক্য এবং এই শ্রেণীকৃত ঋণ আদায় করাই ব্যাংকটির প্রধান চ্যালেঞ্জ। ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, গত ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটিতে সংঘটিত নানা অনিয়মের ফলে শ্রেণীকৃত ঋণ অনেক বেড়ে (৬৭ দশমিক ৯২ শতাংশ) গেছে। আর শ্রেণীকৃত ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ও প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে এবং মুনাফা অর্জন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবে, গত তিন বছর ধরে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে (জুন ২০১৯) বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৯ হাজার ১১৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা (৫৯ দশমিক ৬০ শতাংশ)। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে (জুন ২০১৮) ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা (৫৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ)। ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে (জুন ২০১৭) ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা (৫২ শতাংশ)।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে সম্পাদিত ‘এপিএ’ অনুযায়ী, সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনার কথা ছিল। এর বিপরীতে ব্যাংকের প্রাথমিক হিসাবে খেলাপি ঋণের স্থিতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ হাজার ৬৮৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
বেসিক ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে গত বছর যে বিশেষ এককালীন ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছিল, অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণকে এ সুবিধা দিচ্ছে না বেসিক ব্যাংক।
‘এপিএ’ অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে বেসিক ব্যাংককে শ্রেণীকৃত ঋণ থেকে ১২৫ কোটি টাকা ও অবলোপনকৃত ঋণ থেকে ১০ কোটি টাকা আদায় করতে হবে এবং অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি ৪৩৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনতে হবে। এছাড়া লোকসানী শাখার স্থিতি ৩০টি থেকে কমিয়ে ২৪টিতে এবং বিভিন্ন ধরনের ৯৫টি (রিট ৩০টি, অর্থঋণ ৪০টি এবং বিভাগীয় ও অন্যান্য ২৫টি) মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে। রেজা