এখন সবার হাতে হাতে ব্যাংক : ড. আতিউর রহমান
মো. আখতারুজ্জামান : প্রতিনিয়ত বাড়ছে মোবাইলে ব্যাংকিং বা আর্থিক সেবার পরিধি। মোবাইল ব্যাংকিং ও জেনারেল ব্যাংকিং রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা লেনদেন হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। কথা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সঙ্গে। যার হাত ধরে দেশে চালু হয়েছিলো এই মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতি।
আতিউর রহমান বলেন, আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যখন ডিজিটাল ব্যাংকিং নিয়ে কাজ শুরু করলাম তখন দেশের মোবাইল ব্যবহাকারিদের নিয়ে ভাবলাম। এদের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তাতে একটা সময় আসবে যখন সবার কাছে একটা করে মোবাইল থাকবে। সেই ভাবনা থেকে মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতি। এটা যেমন গরিব মানুষকে ব্যাংকের আওতায় নিয়ে আসবে সেই সঙ্গে যুক্ত হবে কর্মসংস্থানের। সেই সময়টা ছিলো ২০১০ সালের। পরে ২০১১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এটা সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, যে লোকটা কোনো দিন ভাবতেও পারিনি যে, সে ব্যাংকিং সেবা পাবে। এখন সেই মানুষটির পকেটেও ব্যাংক সেবা। যখন খুশি তখনই ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছে। সেই সঙ্গে এটা মানুষের কাজের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। একজন রিকশা চালক আগে কয়েক মাস পর বাড়িতে টাকা পাঠাতো এখন সেটা প্রতিদিনেই সম্ভব হচ্ছে। এটা ভাবলেই ভালো লাগে। এখন নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, দেশে সব শ্রেণির লোকজন ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের আওতায় চলে এসেছে। বর্তমানে প্রতি হাজার টাকা ক্যাশ আউট করলে ১৫ থেকে ১৮.৫০ টাকা চার্জ নেয়া হচ্ছে। যা অনেকটা বেশি। এ বিষয়ে আতিউর রহমান বলেন, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর ইউএসএসডি কোড চার্জ যদি কমানো যায় তাহলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বর্তমান যে চার্জ রয়েছে সেটা কমিয়ে আনা সম্ভব। তিনি বলেন, এখন প্রতিদিন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যে ১,২০০ থেকে ১,৩০০ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। এই লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে। জেনারেল ব্যাংকিংয়ে ডাটাবেজ পদ্ধতির পরিধি বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে জেনারেল ব্যাংকগুলোকে এই খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। অন্যথায় তারা পিছিয়ে পড়াবে।
তিনি আরও বলেন, করোনাকালে মানুষ যখন ঘর থেকে বের হতে পাচ্ছিল না। তখন কেনাকাটা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই করেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। এই সময়ে সরকার অসহায় মানুষকে আর্থিক অনুদান দিয়েছে এই ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার হালনাগাদ পরিসংখ্যানের তথ্য মতে, বর্তমানে ১৫টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত। গত জুন শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৮৭ লাখ ৯৭ হাজার। বর্তমানে মোট ১৫টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৮৭ লাখ ৯৭ হাজার। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোসহ বেশ কিছু সেবা নিতে পাচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকরা। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৫০৪ জন।
বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও ওষুধ ক্রয়ের কোনো ধরনের চার্জ নেই। ব্যক্তি অ্যাকাউন্টে মাসিক লেনদেন সীমা ২ লাখ টাকা করা হয়েছে। দিনে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ও প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার জরুরি পণ্য কেনা যাবে।