মালিবাগে সিরাজুল ইসলাম হাসপাতাল ও পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে র্যাবের অভিযান
সুজন কৈরী : মেয়াদোত্তীর্ণ রিএজেন্ট ও সার্জিক্যাল সামগ্রীসহ নানা অনিয়মের কারণে রাজধানীর মালিবাগে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া পরীক্ষা না করেই রেজাল্ট দেয়ার অভিযোগে মালিবাগের পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত চলা এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন এতে র্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। অভিযানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্সও সমন্বিতভাবে অংশ নেয়।
অভিযান শেষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, হাসপাতালটিতে মেয়াদোত্তীর্ণ রিএজেন্ট, টেস্টিং কিট ব্যবহার, বিপুল পরিমাণে মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যাল সামগ্রী পাওয়া গেছে। অন্য হাসপাতাল থেকে রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে নিজেদের প্যাডে রিপোর্ট দিতো। হাসপাতালের রোগীদের রক্তের স্যাম্পল সংগ্রহ করে একসঙ্গে রাখতো। ল্যাবে আমরা বেশকিছু প্যাট্রিটিডিক্স পেয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী একজন রোগীর রক্তের স্যাম্পল রাখার জন্য একটি প্যাট্রিটিডিক্স ব্যবহারের কথা। কিন্তু হাসপাতালের ল্যাবে একটি প্যাট্রিটিডিক্সে একসঙ্গে তিনজন রোগীর রক্তের স্যাম্পল রাখা হতো। এতে আমরা ধারণা করছি, হাসপাতালটির দেয়া রোগীদের রক্তের সব পরীক্ষা রিপোর্ট ভুয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত হাসপাতালটিতে যতগুলো মাইক্রো বায়োলজিক্যাল রিপোর্ট তৈরি হয়েছে, তার সবই ভুয়া।
হাসপাতালের অনিয়ম সম্পর্কে সারওয়ার আলম বলেন, হাসপাতালের ১২ ও ১৩ তলায় কোভিড-১৯ ইউনিট করা হয়েছে। একই ফ্লোরে রয়েছে হাসপাতালটির মাইক্রো বায়োলোজিক্যাল ল্যাবও। ওই তলায় বাম পাশে কোভিড-১৯ ইউনিট এবং ডান পাশে ল্যাব। কোনো হাসপাতালে কোভিড-১৯ ইউনিট ও মাইক্রো বায়োলোজিক্যাল ল্যাব একই ফ্লোরে একসঙ্গে থাকতে পারে না। মাইক্রো বায়োলোজিক্যাল ল্যাব থাকলেও সেখানে কোনো মাইক্রো বায়োলোজিস্ট ছিল না। ল্যাবের অবস্থাও খুব খারাপ দেখা যায়। ব্লাড সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়নি। সাধারণভাবে ফ্রিজিং করতে দেখা যায়। এসব অনিয়মের কারণে তাদের ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার বলেন, অভিযানকালে যেসব ভুলত্রটি পাওয়া গেছে, সেগুলো শোধরাতে ৭ দিনের সময় দেয়া হয়েছে। যদি এই সময়েরর মধ্যে ভুলত্রুটিগুলো শোধরাতে না পারে, তাহলে পরবর্তীতে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে অভিযান পরিচালার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে কিনা? জানতে চাইলে সাংবাদিকদের সারওয়ার আলম বলেন, আইন অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা ক্ষেত্রে কারও অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ আইন অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী সম্পূর্ণ স্বাধীন। কোর্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিচালনাকারীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা আইন সংবিধান অনুযায়ী সরকার দিতে বাধ্য। আগে অভিযান পরিচালনা করার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়কে জানাতে হতো। তবে বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আমাদের অভিযানের সঙ্গে থাকছে। এতে বাস্তব চিত্রগুলো তারা সরেজমিনে থেকেই জানতে পারছে। আগামীতেও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আমাদের সঙ্গে থেকে সহায়তা করবে। অভিযানে থাকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের (টাস্কফোর্স) যুগ্ম সচিব উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, অভিযনকালে অনেক অনিয়ম দেখা গেছে। হাসপাতালটিতে কোভিড রোগী রয়েছে। কিন্তু এ ধরনের রোগে যে প্রটোকল মানা উচিৎ, সে ধরনের কোনো প্রটোকল মানতে দেখা যায়নি হাসপাতাটিকে। এদিকে সিরাজুল হাসপাতালের পর মালিবাগ মোড় সংলগ্ন পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় পরীক্ষা না করেই নির্ধারিত সময়ের আগেই মাইক্রোবায়োলজি পরীক্ষার রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটিকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।