সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচি পরিচালক সমন্বয়ক ও স্কিম পরিচালকদের আর্থিক ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট হচ্ছে
সোহেল রহমান : এ ছাড়া প্রধান হিসাবদানকারী কর্মকর্তা হবেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব-সচিব
এ লক্ষ্যে অতি সম্প্রতি ‘আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ’ সংক্রান্ত নতুন আদেশ জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। শুধুমাত্র ‘একক বাজেট পদ্ধতি’ (সিঙ্গেল বাজেট সিস্টেম)-এর আওতায় গৃহীত কর্মসূচির ক্ষেত্রে নতুন এ বিধান প্রযোজ্য হবে এবং এতে ‘একক বাজেট পদ্ধতি’র আওতাধীন কর্মসূচি পরিচালক-সমন্বয়ক ও স্কিম পরিচালকদের আর্থিক ক্ষমতা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।
আদেশে বলা হয়েছে, আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ সংক্রান্ত বিদ্যমান সংশোধিত আদেশে অনুন্নয়ন (পরিচালন) ও উন্নয়ন বাজেটের আওতাভুক্ত বিভিন্ন ধরনের ব্যয়ের আইটেমের বিপরীতে অর্পিত ক্ষমতার পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু ‘একক বাজেট পদ্ধতি’-তে বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত কর্মসূচির সকল ব্যয় একীভূত থাকায় প্রচলিত আর্থিক ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে কর্মসূচি বাস্তবায়ন অসুবিধাজনক। সে কারণে এ নতুন আদেশ জারি করা হয়েছে।
আদেশ অনুযায়ী, মন্ত্রণালয়-বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব-সচিব তার মন্ত্রণালয়-বিভাগ, সংযুক্ত দপ্তর ও অধস্তন অফিসমূহের প্রাপ্তি এবং মন্ত্রণালয়-বিভাগ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত বাজেট মঞ্জুরি থেকে যে অর্থ ব্যয় হবে, সে বিষয়ে প্রধান হিসাবদানকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব-সচিবকে ৭টি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো হচ্ছেÑযে উদ্দেশ্যে অর্থ বরাদ্দ সে উদ্দেশ্যেই তা ব্যয় করা; অর্থ ব্যয়ে প্রচলিত বিধি-বিধান কঠোরভাবে অনুসরণ ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় না-করা; বাজেটে বিভিন্ন কোডের বিপরীতে বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে প্রকৃত ব্যয় সীমাবদ্ধ রাখা; অর্থ বিভাগের পূর্ব সম্মতি ছাড়া সম্পূরক মঞ্জুরি পাওয়া যাবেÑ এমন প্রত্যাশায় কোনো অর্থ ব্যয় না-করা; সকল প্রকার প্রাপ্তি ও ব্যয় সঠিক কোডে শ্রেণিবিন্যাস-পূর্বক হিসাবভুক্ত করা; প্রতি মাসে প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা কর্তৃক ব্যয়িত অর্থের হিসাব সংক্রান্ত যেসব তথ্য প্রদান করা হয়, এর সঙ্গে হিসাবের সঙ্গতি সাধন করা; অডিট আপত্তিসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। মন্ত্রণালয়-বিভাগসমূহ তাদের আর্থিক ক্ষমতার মধ্যে যতটুকু সঙ্গত বিবেচনা করবে, ততটুকু সংযুক্ত দপ্তর ও অধস্তন অফিসসমূহকে অর্পণ করতে পারবে। আর্থিক ক্ষমতা পুনঃঅর্পণ আদেশে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে যে, প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পূর্ণ ক্ষমতাবান। পাশাপাশি প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে ৮ দফা সাধারণ শর্তও যুক্ত করা হয়েছে।
আদেশে বলা হয়েছে, প্রত্যেক অর্থবছরের শুরুতে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা প্রণয়ন-পূর্বক ক্রয়কারী কার্যালয় প্রধান বা তার কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে যে অনুমোদন নেয়া হবে Ñতা প্রশাসনিক অনুমোদন হিসেবে বিবেচিত হবে।
সরকারি বিশেষ আদেশে ইতিপূর্বে যেসব কর্মকর্তাকে বিশেষ আর্থিক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, তারা সেটা যথারীতি প্রয়োগ করবেন। তবে সংযোজিত তালিকায় প্রদর্শিত কোনো আইটেমের আর্থিক ক্ষমতা যদি বিশেষ আদেশে প্রদত্ত ওই আইটেমের ক্ষমতার চেয়ে বেশি হয়, সেক্ষেত্রে বর্তমান তালিকায় প্রদর্শিত ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা প্রয়োগ করতে পারবেন।
‘সরকারি অর্থ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন ২০০৯’, ফান্ডামেন্টাল ও সাপ্লিমেন্টারি রুল্স, জেনারেল ফিন্যান্সিয়াল রুল্স, ট্রেজারি রুল্স ইতাদি বিভিন্ন সময় পরিবর্তন সাপেক্ষে মন্ত্রণালয়-বিভাগসমূহকে যে আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে, তারা সেগুলো প্রয়োগ করতে পারবে। তবে যেসব বিষয় বিবেচনার জন্য অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে, সেগুলো ছাড়া প্রচলিত বিধান অনুযায়ী যেসব বিষয়ে অন্যান্য মন্ত্রণালয়/বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করার আবশ্যকতা রয়েছেÑতা বহাল থাকবে।
অর্পিত ক্ষমতার আওতাভুক্ত সকল বিষয়ে মন্ত্রণালয়, বিভাগসহ, সংযুক্ত দপ্তর ও অধস্তন অফিসমূহ কর্মসূচি পরিচালক-সমন্বয়ক ও স্কিম পরিচালক সংশ্লিষ্ট হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা বরাবর মঞ্জুরি আদেশ জারি করবে। তবে এক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের উল্লেখ করতে হবে। এর একটি হচ্ছেÑএ অফিস স্মারকের মাধ্যমে অর্পিত ক্ষমতার আওতায় মঞ্জুরি আদেশ জারি করা হয়েছে; দ্বিতীয়টি হচ্ছেÑঅনুমোদিত বাজেটে এ বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রয়েছে এবং এটি থোক বরাদ্দ হিসেবে রাখা হয়নি। যেসব বিষয় অর্থ বিভাগের বিবেচনার জন্য পাঠাতে হবে, সেগুলো মন্ত্রণালয়-বিভাগ কর্র্তৃক জারিকৃত মঞ্জুুরি আদেশসমূহ অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগ কর্তৃক পৃষ্ঠাংকিত হওয়ার প্রধান সিাব রক্ষণ কর্মকর্তা বরাবর পাঠাতে হবে। বাজেটে অর্থ বরাদ্দ নেই বা যে অর্থ বরাদ্দ রয়েছে তা অপর্যাপ্ত, এ রূপ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব বিদ্যমান পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া জোরদার ও দ্বৈততা ক্রমান্বয়ে পরিহার করার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে ‘একক বাজেট পদ্ধতি’-তে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চালু করেছে সরকার। এর আওতায় নির্দিষ্ট মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগসহ, সংযুক্ত দপ্তর ও অধস্তন অফিসমূহের নিয়মিত এবং উন্নয়ন ও সংস্কারধর্মী বিভিন্ন কার্যক্রম অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। কর্মসূচির আওতাভুক্ত উন্নয়ন ও সংস্কারধর্মী কার্যক্রমগুলো স্কিমের আওতায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।