এসডিজির লক্ষ্যের তুলনায় প্রত্যাশিত জিডিপি অর্জন হয়নি : জিইডির প্রতিবেদন
সাইদ রিপন : টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা ও বাস্তবায়নের জন্য নতুন নতুন উপায় উদ্ভাবনের সক্ষমতা বাড়াতে অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই ও দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরালো ভূমিকা পালন করে। বৈশ্বিকভাবে শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বেকারত্বেও চিত্র আর্থিক সংকট পূর্ব সময়ের পর্যায়ে পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট : বাংলাদেশ অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০২০ প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে বিশ্বে মাথাপিছু জিডিপির প্রকৃত প্রবৃদ্ধি ছিল ১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এটি দুই শতাংশের মধ্যে থাকবে। উল্লেখিত প্রবৃদ্ধি ২০১০ সালের তুলনায় যথেষ্ট কম। ওই বছর মাথাপিছু বৈশ্বিক প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ শতাংশ। তবে ২০১৫ সালের তুলনায় বর্তমানের প্রবৃদ্ধি ভালো। ওই বছর এ হার ছিল ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। স্বল্পোন্নত দেশগুলোয় (এলডিসি) ২০১৭ সাওে প্রকৃত মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল গড়ে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২০ সালে এ প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করছে সরকার। প্রত্যাশিত এসডিজির লক্ষ্যের তুলনায় অনেক কম। এসডিজি অর্জনে এলডিসি দেশগুলোর জন্য গড়ে সাত শতাংশ হারে মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সম্প্রতি করোনা ভাইরাস মহামারিতে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলনে ব্যাপক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে ২০০৯ সালের মন্দা পরিস্থিতি থেকে বিশ্ব অর্থনীতির ঘরে দাঁড়ানোর সময় থেকে বিশ্বে শ্রমের উৎপাদনশীলতা বাড়ছে। আর ২০১০ সাল থেকেই ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক প্রবণতায় প্রবাহিত হচ্ছে। ২০১৮ সালে বৈশ্বিক শ্রম উৎপাদনশীলতা ২ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়। যা ২০১০ সালের পর থেকে এটিই সর্বোচ্চ হার।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থান উপার্জনের একটি বড় মাধ্যম হলেও এ খাতে পেশাগত নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ঘাটতির পাশাপাশি কর্মপরিবেশের অবস্থাও ভালো নয়। বিশ্বের যেসব দেশে অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের উপাত্ত আছে, এমন তিন চতুর্থাংশ দেশের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ওইসব দেশে কৃষিবহির্ভূত খাতের অর্ধেকেরও বেশি কর্মসংস্থান অনানুষ্ঠানিক খাতে। ৬২টি দেশের গড় কর্মঘণ্টা ও মজুরির উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ওইসব দেশে জেন্ডারভেদে মজুরি বৈষম্য ১২ শতাংশ। ব্যবস্থাপক পর্যায়ে ও পেশাগত কাজে এ ব্যবধান ২০ শতাংশের ওপরে। বিশেষ করে হস্তশিল্পের কাজ ও হস্তশিল্প পণ্যেও ব্যবসা, কারখানার মেশিন অপারেটর ও যন্ত্রাং সংযোজনকারীদের মধ্যে জেন্ডারভিত্তিক মজুরি বৈষম্য বেশি।
বেকারত্ব নিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা পরবর্তী সময়ে বেকারত্ব সমস্যা অনেকটাই নিরসন হয়েছিল। ২০১৮ সালে বৈশ্বিক বেকারত্বের হার ছিল পাঁচ শতাংশ, যা মন্দা পরবর্তী অবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। পূর্ণবয়স্কদের তুলনায় তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার তিনগুণ বেশি। ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ি, ওই সময় বিশ্বের এক পঞ্চমাংশ তরুণ তরুণী শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণ (এনইইটি) কোন কিছুতেই নিয়োজিত ছিল না। এর অর্থ হলো, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একদিকে তারা যেমন পেশাগত অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারছে না। অন্যদিকে প্রথাগত শিক্ষা বা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষতারও উন্নয়ন ঘটাতে পারছে না। কর্মে নিয়োজিনের ক্ষেত্রে সারাবিশ্বেই একটি স্পষ্ট জেন্ডার ব্যবধান বিদ্যমান। যেসব মানুষ শিক্ষ, কর্ম বা প্রশিক্ষণ কোথাও নেই, তাদের মধ্যে যুবকদের তুলনায় যুবতীদেও সংখ্যা দ্বিগুণ।