‘ইজি অব ডুয়িং বিজনেস’ পরিস্থিতি মন্ত্রণালয় দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলেও মাঠ পর্যায়ে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না
সোহেল রহমান : দেশে ব্যবসা সহজিকরণ, ব্যবসা ব্যয় কমিয়ে আনা ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে ‘ইজি অব ডুয়িং বিজনেস’ সংক্রান্ত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির দ্বিতীয় সভায় এমন অভিমত ব্যক্ত করেন সরকারের নীতি-নির্ধারক মহল। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এ-সংক্রান্ত ভার্চুয়াল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বর্তমানে ‘ইজি অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮তম। এ থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দুই অঙ্কের ঘরে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠকে জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য সচিব ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ (বিডা) জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংস্থার নিরলস প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যেই আইএফসির সহযোগিতায় ‘বিডা’ একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে। সাতটি সূচকে ৫৩টি সংস্কার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হলেও এর কার্যকর বাস্তবায়ন নির্ভর করছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার ওপর।
বিডা জানায়, এদিকে করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার সকল কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে চলতি বছরে ‘ইজি অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে প্রত্যাশিত উন্নতি না-ও হতে পারে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে দ্রুততম সময়ে গেজেট-অফিস আদেশ হলেও মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন সঠিকভাবে হয় না। ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংস্কারের পরও প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায় না।
বৈঠক সূত্রমতে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত ‘ইজি অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে উন্নতিকল্পে অপেক্ষাকৃত কম সময়ে যেসব কাজ করা যাবে এবং যে কাজ করলে স্কোর বেশি পাওয়া যাবে সেগুলো প্রথমে করার নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তবে প্রতিটি সূচকেই অগ্রগতি হতে হবে বলে গুরুত্বারোপ করে তিনি।
বিডা প্রণীত কর্মপরিকল্পনা ‘যথাযথ’ হয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, সূচকের উন্নতির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্টভাবে সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পাদনের জন্য কাজের নাম, কার দ্বারা কাজটি সম্পাদিত হবে, তদারককারী-তত্ত্বাবধানকারী কর্তৃপক্ষ এবং চূড়ান্তভাবে কাজটি সুসম্পন্ন হয়েছে মর্মে প্রত্যয়নকারীর নাম সম্বলিত ছকে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। কর্মপরিকল্পনা সময়াবদ্ধ হতে হবে। বৈঠকে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, অপরিকল্পিতভাবে দূরবর্তী স্থানে গড়ে ওঠা শিল্প প্রতিষ্ঠানে যথাসময়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হয় না। এ কারণে সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে অপরিকল্পিত স্থানে শিল্প-কারখানা স্থাপন নিরুৎসাহিত করতে হবে। বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধোনের চেষ্টা করছে সরকার। পরিকল্পিত শিল্প এলাকায় স্থাপিত ওয়্যারহাউজ-এর ক্ষেত্রে সংযোগ নির্ধারিত ক্ষেত্রে দেয়া সম্ভব।
বৈঠকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী বলেন, ব্যবসা ব্যয় কমাতে মিউনিসিপালিটি ট্যাক্স কমানো হলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় কমে যেতে পারে। এছাড়া ত্রৈমাসিক হিসেবে ট্যাক্স ধার্য করা হলে কর প্রদানকারীর ওপর তা বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বিডা জানায়, ব্যবসা সহজিকরণ সূচকে উন্নতির লক্ষ্যে শুধু ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন-এর আওতাধীন এবং আরজেএসসি-তে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ট্যাক্স কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে, এসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক কম। ফলে এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় খুব বেশি কমবে না।
বিশ্বব্যাংক যে ১০টি সূচকের ভিত্তিতে ব্যবসার পরিবেশের সহজীকরণ প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে সেগুলো হচ্ছেÑব্যবসা শুরু, নির্মাণ অনুমোদন, বিদ্যুৎপ্রাপ্তি, সম্পত্তি নিবন্ধন, ঋণপ্রাপ্তি, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর স্বার্থরক্ষা, কর পরিশোধ, সীমান্ত বাণিজ্য, চুক্তি কার্যকর ও দেউলিয়াত্ব মীমাংসা। ব্যবসা শুরুর সূচকটি পরিমাপ করা হয় ব্যবসার বাণিজ্যিক বিরোধ মেটাতে প্রয়োজনীয় সময় ও ব্যয় এবং এ-সংক্রান্ত আইনি পদ্ধতির গুণগত মানের ওপর ভিত্তি করে।