কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জে হাওর বেষ্টিত নদীতে ড্রেজিং ও বাঁধ রক্ষায় ১২০০ কোটি টাকার প্রকল্প
সাইদ রিপন : ‘কিশোরগঞ্জের ১০টি এবং হবিগঞ্জের ১টি উপজেলার বিভিন্ন নদী ভাঙ্গন কবলিত স্থান রক্ষার্থে নদীতীর প্রতিরক্ষা কাজ, ওয়েভ প্রটেকশন ও নদী ড্রেজিং-খাল পুনঃখনন’ শীর্ষক প্রকল্পটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পিইসি সভায় প্রকল্পের আওতায় ১৭ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার রক্ষাবাঁধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। অন্যদিকে প্রকল্পের গাড়ি ক্রয়, বিদেশে প্রশিক্ষন ও বিলাসী কয়েকটি অঙ্গ অংশ বাদ দিতে বলেছে পিইসি। একনেকে অনুমোদনের পর চলতি বছর থেকে জুন ২০২৪ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
প্রকল্পের কার্যপত্রে দেখা গেছে, হাওর বেষ্টিত কিশোরগঞ্জ জেলায় ছোট বড় ৬টি নদী বয়ে গেছে। এ নদীর অনেকগুলোই ভাঙ্গন প্রবন। এজন্য কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জের ১১ উপজেলা বিভিন্ন নদী ভাঙ্গন কবলিত স্থান রক্ষার্থে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার। একই সঙ্গে ওসব নদী ড্রেজিং ও বিভিন্ন খাল পুনঃখননও করা হবে। এ উদ্দেশ্যে এক হাজার ১১২ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিতে চায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ১৭ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার নদীর তীর প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৭৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, ৬৫ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং বাবদ ৪৩১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, ৩৭ দশমিক ৪০০ কিলোমিটার খাল পুনঃখননে ৩২ কোটি ২৮ লাখ টাকা, আট কিলোমিটার ওয়েব প্রটেকশনে ৪৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা। প্রকল্পে ৪৩ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণে ৪ কোটি ৯১ লাখ টাকসহ প্রকল্পে একটি জিপ, তিনটি মোটরসাইকেল, একটি স্পিড বোটসহ বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয়, বনায়ন, আবাসিক ও অনাবাসিক ভবন নির্মাণ ও বিদেশে প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য খাতে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। পিইসি সভার কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, করোনার কারনে সরকার অনেক ব্যয় সংকোচন নীতি কারণে বেশ কিছু কম্পোনেন্ট বাতিল করার নির্দেশনা দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এছাড়া ১৭ কিলোমিটার নদী রক্ষাবাধের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, কিশোরগঞ্জের নদীগুলো যদি ফ্লাশ ফ্লাড এর কারণ হয় তাহলে এত দীর্ঘ নদী তীর প্রতিরক্ষা কতটুকু যৌক্তিক। এছাড়া পুরো নদীর দৈর্ঘ, কতটি স্থানে তীর প্রতিরক্ষা কাজ করা হবে, হাইড্রোলজিক্যাল ও মরফোলজিক্যাল স্টাডি ও ব্যথেমেট্রিক সার্ভের মাধ্যমে বিস্তারিত ডিজাইন এবং ডিজাইনের ভিত্তিতে ব্যয় প্রাক্কলন করা প্রয়োজন। যদিও প্রস্তাবিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) তা উল্লেখ করা হয়নি। অন্যদিকে নদী তীর প্রতিরক্ষা কাজের পর কি কি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষা পাবে তাও উল্লেখ করা হয়নি ডিপিপিতে।
প্রকল্পের আওতায় অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাবদ ৪২ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। বৈশ্বিক করোনা পরবর্তী অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় সরকারী অর্থের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে প্রকল্পের আওতায় অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণের সংস্থান বাদ দিতে বলেছে কমিশন। প্রকল্পের আওতায় ১টি জিপ ক্রয় বাবদ ৯৪ লাখ টাকা, ৩টি মোটরসাইকেল ক্রয় বাবদ ৫ লাখ টাকা, ১টি স্পিড বোট ক্রয় বাবদ ৫০ লাখ টাকা, ১টি ইঞ্জিন বোট বাবদ ৭ লাখ টাকা, ৭ সেট কম্পিউটার বাবদ ৫ লাখ টাকা, ২টি ফটোকপিয়ার বাবদ ৩ লাখ টাকা, প্রকৌশল ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি বাবদ ৪০ লাখ টাকা এবং আসবাবপত্র বাবদ ১৫ লাখ টাকা সংস্থান রাখা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, সরকারের সীমিত সম্পদের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে প্রকল্পের আওতায় ২টি মোটরসাইকেল ক্রয় বাবদ ৩ লাখ টাকা, ২ সেট কম্পিউটার (প্রিন্টার ও স্ক্যানারসহ) বাবদ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ১টি ফটোকপিয়ার বাবদ দেড় লাখ টাকা, ১ সেট লেভেলিং মেশিন ও টোটাল স্টেশন বাবদ ৫ লাখ টাকা সংস্থান রাখা যেতে পারে। তবে ১টি জিপ, ১টি স্পিড বোট, ১টি জলযান এবং আসবাবপত্র বাবদ বরাদ্দ বাদ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৬৫ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং বাবদ ৪৩১ দশমিক ৭৭ কোটি টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে, যা প্রতি ঘনমিটারে ১৮১ দশমিক ৪০ টাকা। প্রকল্পের আওতায় ৪৩ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ৪ কোটি ৯১ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। একান্ত প্রয়োজন না হলে জমি অধিগ্রহণ পরিহার করা সমীচীন বলে মনে করে কমিশন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার পক্ষে রয়েছি, কিন্তু কোনভাবেই যেন কেউ বাড়তি বা অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দ না পায় সেটি নিশ্চিত করা হবে। প্রকল্পের অস্বাভাবিক ব্যয় যে করেই হোক ঠেকানো হবে। রেজা