আনিসুল হক, তার পরিবার ও সহকর্মীদের পক্ষে আমরা
নাঈমুল ইসলাম খান : কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হকের সঙ্গে আমি আছি, তার বর্তমান সংকট সময়ে একটু বেশি দৃঢ়ভাবে সমর্থনে আছি।
আমরা জানি বিচার প্রক্রিয়ায় কখনো কখনো, কারো না কারো ভুলে বিচারকের রায় পর্যন্ত ভুল হতে পারে। এরকম ভুল শুধরানোর জন্যই উচ্চতর আদালত রয়েছে, আপিলের সুযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে ভুল শুধরানো হয়েছেও।
আনিসুল হকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, সেটা ব্যক্তি আনিসুল হকের বিরুদ্ধে নয়, আমাদের প্রিয়জন মেরিনা ইয়াসমিনের স্বামীর বিরুদ্ধে নয় কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়েটিভ রাইটিং এর ছাত্রী লক্ষ্মী মেয়ে পদ্ম পারমিতার বাবার বিরুদ্ধেও নয়। অভিযুক্ত কিশোর আলোর সম্পাদক। আমার বিবেচনায় অবশ্য ১ম অভিযুক্ত হবেন মালিক।
এজন্যই ব্যক্তি আনিসুল হকের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ যথাযথ হয়েছে মনে হয়নি।
নাঈম আবরারের মৃত্যু হয়েছে কিশোর আলো পত্রিকার সাংগঠনিক আয়োজনের একটি ইভেন্টে। এই অনুষ্ঠান প্রাইভেট ব্যক্তি আনিসুল হকের আয়োজনে ছিলো না। তাহলে পদ্মর পড়ার টেবিল, মেরিনার বইয়ের আলমিরা কিংবা আনিসুল হকের পেইন্টিং ক্রোক হবে কেন?
আমার কৌতুহল, ক্রোক যদি করতেই হয়, আয়োজক প্রতিষ্ঠান, কিশোর আলোর কোনো সম্পদ কেন নয়।
আমরা কিশোর আলোর এমন কোনো সম্পদ ক্রোকের পক্ষে নই, যা পত্রিকার স্বাভাবিক প্রকাশনায় ব্যাঘাত করে।
যদি করতেই হয়, ক্রোক হতে পারতো কিশোর আলো পত্রিকার তহবিল থেকে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা। তহবিলে যদি তেমন টাকা না থাকে সেক্ষেত্রে কিশোর আলোর যে চূড়ান্ত মালিক প্রতিষ্ঠান, তার কাছ থেকে অর্থ বা মালামাল ক্রোক করা যেতে পারতো।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো, বিচারিক প্রক্রিয়ার পথ ধরেই অনতিবিলম্বে আনিসুল হক ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে যে ক্রোকের আদেশ হয়েছে, তার যথাযথ সংশোধন হয়ে যাবে এবং হয়েছে।
তবে, যেখানে যাই হোক, আমি, আমার পুরো পরিবার এবং আমাদের সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানগুলো অবশ্যই আনিসুল হকের পাশে আছে এবং থাকবে।
আমরা নাঈম আবরারের মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার চাই এবং যাদের সরাসরি দায়িত্বের অবহেলায় এই অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু ঘটেছে, তাদের বিচার ও শাস্তি বিধানের আশা রাখি।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আনিসুল হক কোনোভাবেই তার জ্ঞাতসারে বা সরাসরি কর্তব্য পালনের অবহেলায় নাঈম আবরারের মৃত্যুর জন্য দায়ী নন। বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক ও কবি আনিসুল হকের মানবিকতা এবং দায়িত্ববোধের ওপর আমরা আস্থাশীল। গত বুধবার আনিসুল হকসহ ৫ জনের মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম জসিম উদ্দিন। ক্রোক সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদনের দিন ধার্য হয়েছিলো ২০ সেপ্টেম্বর। গত ৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার একই আদালত ক্রোকের আদেশ প্রত্যাহার করেছেন।
অভিযুক্ত অন্যান্যরা হলেন, প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক মহিতুল আলম, প্রথম আলোর হেড অব ইভেন্ট অ্যান্ড অ্যাকটিভেশন কবির বকুল, নির্বাহী শাহপরান তুষার ও নির্বাহী শুভাশীষ প্রামাণিক। আনিসুল হকের জন্য আমাদের যে ভালোবাসা এবং শুভ কামনা সেটা তার সাথী চার জনের জন্যেও প্রযোজ্য। তারা সকলেই আমাদের প্রিয়জন।
গত বছরের ১ নভেম্বর মাসিক ম্যাগাজিন ‘কিশোর আলো’র বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নাঈমুল আবরারের মৃত্যু হয়। আবরারের বাবা ৬ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আমিনুল হকের আদালতে মামলাটি করেন।
অনুলিখন : শরীফ শাওন