মেগাপ্রকল্পগুলোর মধ্যে গত অর্থবছর শেষে পদ্মাসেতুর বাস্তবায়ন সবচেয়ে বেশি
নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনকালীন সময়েও গত (২০১৯-২০) অর্থবছরে স্বপ্নের পদ্মাসেতু প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৮১ শতাংশ। আর ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার পাওয়া মেগাপ্রকল্পগুলোর বাকি ৭টির বাস্তবায়নে অগ্রগতি ভালো হয়নি বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। পদ্মাসেতু ছাড়াও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, এলএনজি টার্মিনাল ও গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপন, পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পগুলো মেগাপ্রকল্পের তালিকায় রয়েছে। সরসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রকল্পগুলো তদারকি করা হয়। জুলাই মাস পর্যন্ত মেগাপ্রকল্পগুলোর অগ্রগতি প্রতিবেদন তৈরি করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদ্মাসেতু প্রকল্প ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। শুরু থেকে গত জুলাই পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ৪২৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। জাজিরা ও মাওয়া প্রান্তে অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ শতভাগ শেষ। এছাড়া নদী শাসন কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭৪ শতাংশ। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮১ শতাংশ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়িত হচ্ছে। মোট ব্যয় ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। শুরু থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ৩১ হাজার ৭৪৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। আর্থিক ও সার্বিক অগ্রগতি ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। শুরু থেকে গত জুলাই মাস পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭২১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি ৪৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। মেট্রোরেল লাইন-৬ ২০১২ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। গত জুলাই পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ১১ হাজার ৩৯৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৪৭ দশমিক ১০ শতাংশে। করোনার কারণে কয়েক মাস কাজ বন্ধ থাকলেও এখন পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। গত জুলাই পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ১৩ হাজার ২১ কোটি টাকা। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৩৩ দশমিক ১৮ শতাংশ আর সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ।
এছাড়া মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। জুলাই মাস পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ১৩ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৩৭ দশমিক ৩৯ শতাংশে। এছাড়া প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি ৩১ দশমিক ৬০ শতাংশ। দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছাকাছি ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণে ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। গত জুলাই পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ৪ হাজার ৯৫৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। তাছাড়া সার্বিক ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৪১ শতাংশে। এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ ও গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপন প্রকল্পের প্রারম্ভিক কার্যাবলী ও মালামাল সংগ্রহের কাজ এরই মধ্যে শতভাগ শেষ হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি হুকুম দখলের কার্যক্রম গড়ে ৯৯ দশমিক ১৬ ভাগ শেষ হয়েছে।