স্বাস্থ্য ব্যয় বাবদ বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে
সাইদ রিপন : প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বলেছেন, অনেকে বলেন স্বাস্থ্য ব্যয় বাবদ বছরে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এজন্য আমরা যদি দেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন করতে পারি তাহলে বিশাল অঙ্কের টাকা দেশে রাখা সম্ভব। বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) ‘রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবে রূপায়ণ: বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-৪১’ এর বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের বিভিন্ন কর্তকর্তা ও গণমাধ্যমে অবহিত করে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব। সভায় সভাপতিত্ব করেন জিইডির সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।
পরিকল্পনামন্ত্রী দাবি করে বলেন, বিশ্বের মধ্যে সব থেকে পরিকল্পিত দেশ বাংলাদেশ। সব থেকে পরিকল্পিত সুন্দর পরিকল্পনার জাতি আমরাই। কোভিড-১৯ যন্ত্রণা আমাদের একটু ভোগাচ্ছে। আমরা অনেক ক্ষেত্রে ভালো আছি, সঠিক পথেই আছি। অনেক সূচকে ভালো আছি তবে আদর্শিক সূচকে ভালো নেই। আমরা ধারণা পাওয়ার জন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করে থাকি। আমাদের ৫ বছর মেয়াদি, ১০ বছর, ২০ বছর ও শতবর্ষ মেয়াদি পরিকল্পনা আছে। বিশ্বের অন্য কোন দেশে এমন পরিকল্পনা আছে বলে আমার জানা নেই।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আরও বলেন, রাজনীতি নেতৃত্বের কারণে সঠিক পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কোভিডের কারণে ভারতের অর্থনীতি ২৪ শতাংশ সংকুচিত হলেও বাংলাদেশে তা হয়নি। আমরা রুপালিতে আছি সোনালিতে যাবো। বৃহৎ অর্থনীতির কাতারে আমরা আছি।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, দেশের সুশাসন আনার ক্ষেত্রে গুড গর্ভনেন্স কার্যক্রমটি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। এর ফলে ৪৮টি সূচকের মধ্যে ৩৫টি অর্জন করতে পেরেছি। আমরা যে পরিকল্পনা নিয়েছি তা সঠিক বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্জন করবো। এছাড়া আমাদের ‘ব্লু’ ইকোনোমির অর্জন নেই। এটাকে গুরুত্ব দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে বড় বড় প্রকল্প নিয়ে আসতে বলেছি। বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে সামনে আরও হবে, এ বিষয়গুলো মাথায় নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে যে ইশতেহার দেয় তাতে ভবিষ্যত উন্নয়ন কর্মকা-ের রুপরেখা বর্ণিত থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে ২০০৮ সালের আগে কোন নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সুচিন্তিত রুপরেখা সম্বলিত ইশতেহার আমি দেখিনি। ২০০৮ সালের আওয়ামী লীগের ইশতেহারে এ ধরনের সুনির্দিষ্ট রুপরেখা দেয়া হয়েছিল। যার সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। রূপকল্পে উল্লেখ করা হয়েছে, স্বল্পোন্নত থেকে মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। সরকারের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। দেশে দারিদ্র্যের হার নেমে আসবে তিন শতাংশে। চরম দারিদ্র্যের হার হবে ১ শতাংশেরও কম। গ্রাম-শহরের বৈষম্য কমবে। ৮০ শতাংশ মানুষ শহুরে জীবনযাপনের সব সুবিধা পাবে। বাড়বে গড় আয়ু, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)।
২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত এই বাংলাদেশ গড়ে তোলার কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে সরকার। সেই রূপরেখা অনুযায়ী অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এর বাস্তবায়ন। এমন আরও তিনটি, অর্থাৎ মোট চারটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত রূপ পাবে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় রয়েছে ১২টি অধ্যায়। এর মধ্যে যেমন শিল্প ও বাণিজ্য, কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মতো বিষয় রয়েছে, তেমনি রয়েছে সুশাসন, মানব উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের মতো বিষয়গুলোও। এর মধ্যে সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো আছে, যাতে প্রতি অর্থবছরের অর্থনীতির সূচকগুলো লক্ষ্যমাত্রা বিস্তরিতভাবে দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়নাধীন প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, তথা রূপকল্প ২০২১-এর ধারাবাহিকতায় ২০ বছর মেয়াদি দ্বিতীয় এই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। রেজা