আগামী বছর প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করবে বিপিসি
সোহেল রহমান : আগামী ২০২১ সালের পঞ্জিকা বছরে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) পাঁচ ক্যাটাগরির ৪৯ দশমিক ৮০ লাখ পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৩৯ দশমিক ৬০ লাখ মেট্রিক টন ‘গ্যাস অয়েল’ (ডিজেল), ৪ দশমিক ৮০ লাখ মেট্রিক টন ‘জেট এ ফুয়েল’, ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন ‘মেরিন ফুয়েল’, ১ দশমিক ৮০ লাখ মেট্রিক টন ‘মো-গ্যাস’ (অকটেন) ও ৮০ হাজার মেট্রিক টন ‘ফার্নেস অয়েল’ রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন’ (বিপিসি) এসব জ্বালানি তেল আমদনি করবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে দেশের মোট জ্বালানি চাহিদার অর্ধেক সরকারি (জি-টু-জি) পর্যায়ে অর্থাৎ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির আওতায় আমদানি করা হয়। অবশিষ্ট অর্ধেক আমদানি করা হয় উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে। সে হিসাবে ২০২১ সালে পরিশোধিত জ্বালানির মোট চাহিদার (৪৯ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন) অর্ধেক অর্থাৎ ২৪ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন জি-টু-জি পর্যায়ে এবং সম-পরিমাণ জ্বালানি তেল উন্মুক্ত দরপত্র প্রক্রিয়ায় আমদানি করা হবে। সূত্র জানায়, কেরোসিন ও পেট্রোলের চাহিদা দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থাৎ ‘ইস্টার্ণ রিফাইনারি লিমিটেড’ (ইআরএল) এবং অন্যান্য উৎস থেকে পূরণ করা হয়। বর্তমানে দেশে পেট্রোলের চাহিদা বাড়ছে। ‘বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন’ (বিএসটিআই)-এর নির্ধারিত মানদন্ড অনুযায়ী পেট্রোলের বর্ধিত চাহিদা পূরণে আমদানিকৃত অকটেন ব্লেন্ডিং-এর মাধ্যমে পেট্রোল উৎপাদন করবে ‘ইআরএল’।
সূত্রমতে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে দুই মাসেরও বেশি দেশব্যাপী লক-ডাউনের কারণে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটে বিমান ও দেশের অভ্যন্তরে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ওই সময়ে জ্বালানি চাহিদা কমেছিল। চলতি পঞ্জিকা বছরের প্রথম ৯ মাসে মোট চাহিদার ৭৫ শতাংশ ডিজেল, ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ ‘জেট এ-১’ ফুয়েল, ৬৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ অকটেন ও মাত্র ১০ শতাংশ মেরিন ফুয়েল আমদানি করা হয়েছে। তবে ডিজেলের চাহিদা এখন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে এবং অকটেনের চাহিদা অনেক বেড়েছে। এছাড়া বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে ফার্নেস অয়েল আমদানি বেড়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো নিজেরা ফার্নেস অয়েল আমদানি করায় চলতি পঞ্জিকা বছরে ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন চাহিদার বিপরীতে কোনো ফার্নেস অয়েল আমদানি করেনি বিপিসি। জানা যায়, ২০২১ সালে জি-টু-জি-এর আওতায় বিভিন্ন দেশের ৮টি প্রতিষ্ঠান থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে। এর মধ্যে কুয়েত-এর ‘কেপিসি’ থেকে দুই ক্যাটাগরির মোট ১২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন (এর মধ্যে ১০ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল ও ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন ‘জেট এ-১’ ফুয়েল); মালয়েশিয়া’র ‘পিটিএলসিএল’ থেকে চার ক্যাটাগরির মোট ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন (এর মধ্যে ২ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল, ১০ হাজার মেট্রিক টন ‘জেট এ-১’ ফুয়েল, ৩০ হাজার মেট্রিক টন অকটেন ও ২০ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল); আরব আমিরাত-এর ‘ইনোক’ থেকে দুই ক্যাটাগরির মোট ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন (এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল ও ৪০ হাজার মেট্রিক টন মেরিন ফুয়েল); চীন-এর ‘পেট্রো চায়না’ থেকে দুই ক্যাটাগরির মোট ১ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন (এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল ও ২০ হাজার মেট্রিক টন মেরিন ফুয়েল); চীন-এর ‘ইউনিপেক’ থেকে দুই ক্যাটাগরির মোট ২ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন (এর মধ্যে ২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল ও ১০ হাজার মেট্রিক টন ‘জেট এ-১’ ফুয়েল); ইন্দোনেশিয়া’র ‘বুমি সিয়াক’ থেকে পাঁচ ক্যাটাগরির মোট ৩ লাখ মেট্রিক টন (এর মধ্যে ১ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল, ১০ হাজার মেট্রিক টন ‘জেট এ-১’ ফুয়েল, ৬০ হাজার মেট্রিক টন অকটেন, ২০ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল ও ৪০ হাজার মেট্রিক টন মেরিন ফুয়েল); থাইল্যান্ড-এর ‘পিটিটিটি’ থেকে দুই ক্যাটাগরির মোট ১ লাখ মেট্রিক টন (এর মধ্যে ৬০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল ও ৪০ হাজার মেট্রিক টন মেরিন ফুয়েল) এবং ভারত-এর ‘নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড’ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা হবে।সম্পাদনা : শাহীন চৌধুরী।