‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্প একনেকে উঠছে কাল ১৭৪ জন কর্মকর্তার ভ্রমণে ব্যয় হবে ৭ কোটি টাকা
সাইদ রিপন : আগামীকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। একনেকে অনুমোদনের পর দেশের ২৯টি জেলার ১৩৪টি উপজেলায় চলতি বছর থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মৎস্য অধিদফতর। মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণ এবং জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যমে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতেই ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক একটি প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. জাকির হোসেন আকন্দ প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রকল্পের ডিপিপিতে দেখা গেছে, এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৭৪ জন কর্মকর্তার ভ্রমণ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৯৯ লাখ ৭২ হাজার টাকা। যা প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। তবে এই ভ্রমণ দেশে না বিদেশে সেটি উল্লেখ করা হয়নি। এ বিষয়ে জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় ভ্রমণ ব্যয়ে কাঁটছাট করা হয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় দেশি বা বিদেশে ভ্রমণ করা অব্যাহত রাখতে হবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ এবং নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রফতানি আয় ও আমিষ সরবরাহে ইলিশের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ এবং জিডিপিতে অবদান এক শতাংশ। উপকূলীয় মৎস্যজীবীদের জীবিকার প্রধান উৎস্য হচ্ছে ইলিশ। প্রায় ৫ লাখ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি নিয়োজিত এবং ২০ থেকে ২৫ লাখ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। সারাবিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৬০ শতাংশ আহরিত হয় এ দেশের নদ-নদী থেকে। আশির দশকের আগে মোট মৎস্য উৎপাদনের ২০ শতাংশ ছিল ইলিশের অবদান। প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে ইলিশের উৎপাদন আশির দশকের তুলনায় কিছুটা কমেছে। এর অন্যতম কারণ হলো অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের পরিবেশগত পরিবর্তনের ফলে বিশেষ করে নদ নদীতে অপরিকল্পিত বাঁধ ও কালভার্ট ব্রিজ নির্মাণের কারণে এবং উজান হতে পরিবাহিত পলি জমার জন্য পানি প্রবাহ ও নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় জলজ পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ছে। ফলে ইলিশ মাছের পরিভ্রমণ পথ, প্রজনন ক্ষেত্র, বিচরণ ও চারণক্ষেত্র দিন দিন পরিবর্তিত ও বিনষ্ট হচ্ছে।
ডিপিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বিচারে অবৈধ কারেন্ট জাল, বেহুন্দি জাল, বেড় জাল, চড় ঘড়া জাল, মশারি জাল, পাইজাল এবং সরঞ্জাম দিয়ে জাটকা ও মা ইলিশ আহরণও ইলিশের উৎপাদন হ্রাসের অন্যতম কারণ। এসব ক্ষতিকর অবৈধ জাল ও সরঞ্জাম নির্মূল করা না গেলে ইলিশের কাঙ্খিত উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে। তাই জাটকা ও মা ইলিশ সংরক্ষণের মাধ্যমে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি করাকে প্রস্তাবিত প্রকল্পের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ইলিশ সম্পদ রক্ষার উদ্দেশ্য অর্জনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ নদী, মাছবাজার, মাছঘাট, হাট, আড়ৎ ইত্যাদি জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা অপরিহার্য।
প্রকল্পটির ওপর গত ৮ মার্চ পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলোর অন্যতম হচ্ছে, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে জেলে প্রতি ২৫ হাজার টাকা নগদ প্রদানের পরিবর্তে স্থানীয় চাহিদার জন্য সমপরিমাণ টাকার উপকরণ এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে ও প্রশিক্ষণার্থীদের মোবাইল নম্বরসহ ডাটাবেজ সংরক্ষণ করতে হবে। এক্ষেত্রে উপকরণের বিবরণ ও পরিমাণ, উপকরণভিত্তিক প্রশিক্ষণের ট্রেড নির্ধারণ, প্রশিক্ষণের মেয়াদকাল, প্রশিক্ষণ কারিকুলাম, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদির তথ্যাদি ডিপিপিতে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া অবৈধ কারেন্ট জাল ধ্বংস করে জেলেদের মৎস্যবান্ধব জাল দেওয়ার ক্ষেত্রে বাজার দরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জালের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। জালের নাম ব্যাস, সূতার মান সুনির্দিষ্টভাবে ডিপিপিতে উল্লেখ করতে হবে। প্রকল্পের আওতায় নিখোঁজ ৫০ জন জেলের পরিবারের জন্য এক লাখ করে আর্থিক সহায়তা প্রদান আইটেমটি প্রকল্প থেকে বাবদ দিতে হবে। শুধুমাত্র মা ইলিশ সংরক্ষণের নদী, মোহনা, মাছঘাট, আড়ত ইত্যাদিতে ২২ দিনের অভিযান পরিচালনার জন্য অভিযান প্রতি ৫ হাজার টাকার সংস্থান ডিপিপিতে রেখে এ আইটেমের ব্যয় কমিয়ে প্রাক্কলন করতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ইলিশের উৎপাদন ও প্রাপ্যতা বাড়ানোর মাধ্যমে আমিষের চাহিদা পূরণ হওয়ার পাশাপাশি ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা বাড়বে ও উপকূলীয় জেলেদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। তাই প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। সম্পাদনা : শোভন দত্ত