আমার দেশ • নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ২ • শেষ পাতা
কাঁচা পাট রপ্তানিতে প্রতি টনে ২৫০ মার্কিন ডলার শুল্ক আরোপের দাবি ব্যবসায়ীদের
এসআই রাজ : চলতি বছর পাটের উৎপাদন কম হওয়ায় অভ্যন্তরীণ মিলগুলোর উৎপাদন ঠিক রাখতে, চাহিদার বিপরীতে কাঁচা পাটের জোগান নিশ্চিত করতে রপ্তানিতে নিরুৎসাহিত করতে প্রতি টন পাট রপ্তানির ওপর ২৫০ মার্কিন ডলার হারে রপ্তানি শুল্ক আরোপের দাবি জানিয়ে আসছেন পাট শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এ দুটি দাবির বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত কী হবে তা প্রধানমন্ত্রীর মতামতের ওপর নির্ভর করছে বলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, পাটের উৎপাদন কম হওয়া, অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো, পাট রপ্তানি বন্ধ করার সম্ভাব্যতা এবং রপ্তানি শুল্ক বাড়ানো বিষয়ে পাট সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এ বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, বিজেএমসির চেয়ারম্যান এম এ রউফ, বেসরকারি পাটকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুট মিল অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের, বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দসহ পাটচাষি, কাঁচা পাট রপ্তানিকারক, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, কাস্টমসের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত সরকারি বিভিন্ন দফতরের প্রতিনিধিরা কাঁচা পাট রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে অতিরিক্ত শুল্কারোপ এবং সংকটকে কাজে লাগিয়ে কেউ যাতে মজুত করতে না পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের পক্ষে ইতিবাচক মতামত দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছে ওই সূত্র। এদিকে পাট শিল্প বাঁচাতে চলতি এক বছরের জন্য আনকাট বাংলা তোশা রিজেকশন ও বাংলা হোয়াইট রিজেকশন জাতের কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ এবং প্রতি মেট্রিক টন কাঁচা পাট রপ্তানির ওপর ২৫০ মার্কিন ডলার রপ্তানি শুল্ক আরোপের সুপারিশ করে সংবাদ সম্মেলন করেছে বেসরকারি পাটকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুট মিল অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন। গত ৯ সেপ্টেম্বর বুধবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ সুপারিশ উপস্থাপন করেছেন এ দুটি সংগঠনের নেতারা।
বিজেএমএ ও বিজেএসএ বলেছে, দেশে বিদ্যমান পাটকলের সংখ্যা ২৫৯টি। এই পাটকলগুলো পরিচালনায় বছরে প্রয়োজন হয় ৬০ লাখ বেল কাঁচা পাট। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কাজে আরও পাঁচ লাখ বেল কাঁচা পাটের প্রয়োজন হয়। সব মিলিয়ে বছরে দেশে কাঁচা পাটের চাহিদা ৬৫ লাখ বেল। এবারের বন্যা ও খরায় পাটের উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রতিবছর ৭৫ থেকে ৮০ লাখ বেল পাট উৎপাদন হলেও এ বছর পাটের উৎপাদন ৫৫ লাখ বেলের বেশি হবে না। এ বছর চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ১০ লাখ বেল কম হয়েছে। এই অবস্থায় কাঁচা পাট রপ্তানি হলে এই শিল্প সংকটে পড়বে। উল্লেখ্য, প্রতিবছর ৮-১০ লাখ বেল কাঁচা পাট বিদেশে বিশেষ করে ভারতে রপ্তানি হয়। জানতে চাইলে পাবনার পাটচাষি শাহীন আহমেদ জানিয়েছেন, এ বছর বিভিন্ন কারণেই কাঁচা পাটের উৎপাদন কম হয়েছে। করোনাকালে লকডাউনের কারণে শ্রমিকের অভাবে পাটক্ষেতে দুবার নিড়ানি দিতে পারিনি। এর মধ্যেই দেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। আম্পানের কারণে ২০/২৫ দিন বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করায় পাট লম্বা ও মোটা হতে পারেনি। উপরন্তু আগাম বন্যায় দেশের উত্তরবঙ্গে ক্ষেতের কাঁচা পাট ডুবে গেছে। বন্যার কারণে আগাম পাট কেটে ফেলতে হয়েছে বিধায় পাট গাছের উচ্চতা প্রায় আড়াই ফুট কম হয়েছে। পাট শিল্প সশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই খাতে কর্মরত আছেন ২ লাখ শ্রমিক। পরোক্ষভাবে এই শিল্প খাতে কোনও না কোনোভাবে ৪ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। বছরে প্রায় ৬ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন পাটপণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ বছরে আয় করে ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। দেশে মোট পাটপণ্য উৎপাদনের পরিমাণ ৭ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন।
বিজেএসএ-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহিদ মিয়া জানিয়েছেন, এমন পরিস্থিতিতে কাঁচা পাট রপ্তানি করা হলে দেশের এই শিল্প মহাসংকটে পড়বে। পাট শিল্প বন্ধ হয়ে যাবার আশঙ্কাও রয়েছে। তিনি জানান, আমরা মাত্র একটি বছরের জন্য কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধের সুপারিশ করেছি। আগামী বছর যদি চাহিদার ৬৫ লাখ বেলের বেশি কাঁচা পাট দেশে উৎপাদিত হয় তাহলে আবার রপ্তানির অনুমতি দেওয়া যাবে বলেও জানান তিনি। তিনি জানান, এক মণ কাঁচা পাট রপ্তানি করে যে দাম পাবো, সেক্ষেত্রে সমপরিমাণ পাট প্রক্রিয়াজাত করে পাটপণ্য রপ্তানি করলে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা বেশি দাম পাবো। জানতে চাইলে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী জানিয়েছেন, কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধের বিষয়ে বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের দাবির বিষয়টি শুনেছি। আমরা সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছি। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও পরামর্শ করতে হবে। সূত্র : বাংলাট্রিবিউন। সম্পাদনা : শোভন দত্ত