জনগণের ‘আস্থাহীনতায়’ দেশের বীমাখাত : রাষ্ট্রায়ত্ত দুই বীমা করপোরেশনের অভিমত
সোহেল রহমান : অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ-এর সঙ্গে সম্পাদিত বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি’ (এপিএ)-তে দেশের প্রচলিত বীমা শিল্প নিয়ে জনগণের আস্থার সঙ্কটের কথা জানিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত দুই বীমা কর্পোরেশন।
‘সাধারণ বীমা কর্পোরেশন’-এর মতে, ‘দেশের বীমা শিল্পে প্রচলিত বীমা সম্পর্কে জনগণের আস্থাহীনতা ও সচেতনতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। গ্রাহক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা থাকায় জনগণের দোরগোড়ায় সহজে বীমা সেবা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।’
অন্যদিকে ‘জীবন বীমা কর্পোরেশন’-এর মতে, বীমা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে আস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে বীমা আইনের যথাযথ অনুসরণ, যথাসময়ে বীমা দাবি নিষ্পত্তি করা ও বীমা খাতকে পুরোপুরি ডিজিটাল সেবার আওতায় আনা প্রয়োজন।
এদিকে ‘এপিএ’র লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত দুই বীমা সংস্থাকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা প্রিমিয়াম আয় করতে হবে। এর মধ্যে তিন ক্যাটাগরিতে ‘সাধারণ বীমা কর্পোরেশন’-এর প্রিমিয়াম আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১ হাজার ২৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি খাতের প্রিমিয়াম বাবদ ৩৮৫ কোটি টাকা, বেসরকারি খাতের প্রিমিয়াম বাবদ ১৪ কোটি টাকা ও পুনঃবীমা প্রিমিয়াম খাতে ৮৩২ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে এ তিন ক্যাটাগরির প্রিমিয়াম খাতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৫৩৫ কোটি টাকা, ১৯ কোটি টাকা ও ৭২৭ কোটি টাকা।
অন্যদিকে প্রিমিয়াম বাবদ ‘জীবন বীমা করপোরেশন’-এর আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা গত অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭০ কোটি টাকা। এছাড়া বিনিয়োগ খাতে সংস্থাটির আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১০৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪০ কোটি টাকা।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এপিএ’র আওতায় চলতি অর্থবছরে সাধারণ বীমা-কে ৩৩৯ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন, রিজার্ভ ফান্ড ১ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১১৫ কোটি টাকায় উন্নীত করা এবং গ্রাহক সংখ্যা ৫ হাজার বাড়িয়ে ১ লাখ ২৫ হাজারে উন্নীত করতে হবে।
অন্যান্যের মধ্যে চলতি অর্থবছরে সাধারণ বীমা-কে ৮০টি অভ্যন্তরীণ অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, ৮০ শতাংশ অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করতে হবে, ৯০ দিনের মধ্যে বীমা দাবি নিষ্পত্তির হার ৮০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।
এসব লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ‘সাধারণ বীমা করপোরেশন’ বলছে, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের কারণে বীমা ও পুনঃবীমা প্রিমিয়াম অর্জনসহ কর্পোরেশনের সার্বিক সূচকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হতে পারে। এছাড়া দক্ষ জনবলের অভাবে মানসম্মত বীমা পণ্য উদ্ভাবন ও বাজারজাতকরণ এবং কমিশন প্রদানে অসামঞ্জস্যতা থাকায় বীমা প্রিমিয়াম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে ৫৯০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ‘জীবন বীমা করপোরেশন’। এপিএ’র লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, কর্পোরেশনের লাইফ ফান্ডের আকার ১০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা এবং নতুন গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার ৭০০ জন বাড়িয়ে ৩০ হাজারে উন্নীত করতে হবে।
অন্যান্যের মধ্যে চলতি অর্থবছরে জীবন বীমা-কে ৭০টি অভ্যন্তরীণ অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, ৬০ শতাংশ অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করতে হবে, ৯০ দিনের মধ্যে মরণোত্তর বীমা দাবির পরিশোধের হার ৮০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। ‘জীবন বীমা করপোরেশন’-এর ভাষ্যমতে, সংস্থাটির প্রধান সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ হচ্ছেÑ বেসরকারি জীবন বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা মোকাবেলা করা; প্রশাসনিক ও আর্থিক শৃঙ্খলার মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা; বীমা দাবি সম্পর্কে জনগণের অধিকতর আস্থা প্রতিষ্ঠা ও যুগোপযোগী গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করা।