২০২৫ সালের মধ্যে শত ভাগ বিদ্যুৎ প্রি-পেইড মিটারের টার্গেট সরকারের
শাহীন চৌধুরী : বিদ্যুতের বিল খেলাপি বন্ধ, সিস্টেম লস কমানো এবং চুরি বন্ধের জন্য প্রি-পেউড মিটার প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ গ্রাহকের সংখ্যা তিন কোটি ৬০ লাখ। এরমধ্যে প্রি-পেইড মিটারে বিদ্যুৎসেবা নিচ্ছেন মাত্র ৩১ লাখ গ্রাহক। ফলে ৩ কোটি ৩০ লাখ গ্রাহক এখনও প্রি-পেইড মিটারের বাইরেই রয়েছেন। বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, ২০২৫ সালের মধ্যে সব গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু মাত্র পাঁচ বছরে ৩ কোটি ৩০ লাখ গ্রাহকের ঘরে প্রি-পেইড মিটার পৌঁছানো সম্ভব কিনা, তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা সংশয় প্রকাশ করছেন।
সূত্রমতে, দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের সদ্ব্যবহার ও অপচয় রোধে স্বয়ংক্রিয় বিলিং সুবিধা সৃষ্টি করার জন্য ২০১১ সালে প্রি-পেইড মিটার চালু করা হয়। বর্তমানে প্রি-পেইড মিটার আরও আধুনিকায়ন করে অনলাইন স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার চালু করা হয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রি-পেইড মিটার সংযোগের পাঁচ বছরে মাত্র ৩০ লাখ মিটার সংযোগ দিতে পেরেছে। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে অনেকটা দ্রুতগতিতে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। সেই হিসাবে পাঁচ বছর পেরিয়েছে।
নির্ধারিত সময়ে মধ্যে মাত্র ৩১ লাখ গ্রাহক পেয়েছেন প্রি-পেইড মিটার। উপরন্তু প্রতিমাসে ৩ লাখ নতুন গ্রাহক যোগ হচ্ছেন। ৬টি বিতরণ কোম্পানি আর তিন কোটি ৩০ লাখ গ্রাহক ধরে বাকি সময় হিসাব করলে প্রতিটি কোম্পানির বছরে মিটার লাগাতে হবে ১১ লাখ। কিন্তু কোনও কোম্পানিই পাঁচ লাখের বেশি মিটার লাগানোর পরিকল্পনা করছে না। এই হারে কাজ করলে গ্রাহকের ঘরে প্রি-পেইড মিটার দিতে আরও পাঁচ বছর অতিরিক্ত সময় দরকার।
বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিতে দুই ধরনের মিটারেই বিদ্যুৎসেবা দেওয়া হচ্ছে। ফলে সেবার তারতম্যের পাশাপাশি প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারীরা বিদ্যুৎ ব্যবহারের আগে এবং অন্য গ্রাহকরা বিদ্যুৎ ব্যবহারের পর বিল দিচ্ছেন। এর ফলে গ্রাহকের মধ্যেও অসন্তোষ রয়েছে। সূত্রমতে, এ পর্যন্ত বিপিডিবি ১১ লাখ ৪৫ হাজার, আরইবি ১০ লাখ ১০ হাজার ৫১৮, ডিপিডিসি ৪ লাখ ৪১ হাজার ৫১৯, ডেসকো ২ লাখ ৯৩ হাজার ৮৩৮, ওজোপাডিকো ১ লাখ ৯৫ হাজার ৫৯১, নেসকো ১৮ হাজার ৮৯৪টি বসিয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, সরকার ২০২০ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে চায়। এজন্য সরকার বিদ্যুৎ খাতে অগ্রাধিকার দিতে এ খাতের উন্নয়নে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি সরকার বিদ্যুতের সাশ্রয়ী, দক্ষ, নিরাপদ ও টেকসই ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করছে। তিনি বলেন, গ্রাহক সেবার মান বাড়াতে এই খাতকে আধুনিকীকরণ, ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর ও গ্রাহকবান্ধব করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এজন্য দেশব্যাপী প্রি-পেইড মিটার অথবা স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সারা দেশে বিদ্যুৎ খরচ হ্রাস, পাইলফেরেজ এবং ওভারবিলিং হ্রাস করার লক্ষ্যে সকল গ্রাহককে স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারিং সিস্টেমের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের অধীনে ছয়টি বিতরণ সংস্থা পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন করবে। প্রি-পেমেন্ট মিটারিং সিস্টেম অ-প্রযুক্তিগত ক্ষতি শূন্য শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করতে পারে। তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলি সিস্টেম লস, পাইলফেরেজ এবং বিলের বকেয়া হ্রাস করতে সারা দেশে স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে।