নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ৪ • শেষ পাতা
শনাক্তকরণ প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় খাতের ব্যয়ে আপত্তি পরিকল্পনা কমিশনের
সাইদ রিপন : ডোপ টেস্টের মাধ্যমে মাদকাসক্ত শনাক্ত করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। এ লক্ষে সারাদেশে পয়েন্ট অব কনটাক্টের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে মাদক পরীক্ষা করে তা নির্ধারণ করত চায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এজন্য ডোপ টেস্টের মাধ্যমে চাকুরিতে যোগদানকারী প্রার্থীদের যথাযথ স্বাস্থ্য যাচাই করে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সক্ষমতা বাড়ানো হবে।
এ লক্ষ্যে ‘মাদকাসক্ত সনাক্তকরণে ডোপ টেস্ট প্রবর্তন (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। প্রকল্পটির ওপর আগামী রোববার প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় অনুষ্ঠিত হবে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের পর চলতি বছর থেকে ডিসেম্বর ২০২২ সালে বাস্তবায়ন করবে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাবিত ডিপিপি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের পর ঢাকা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাঙ্গামাটি, নোয়াখালী, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, পটুয়াখালী, সিলেট, রংপুর ও দিনাজপুরে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পটি এডিপিতে বরাদ্দহীনভাবে অননুমোদিত প্রকল্পের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রমগুলো হচ্ছে, প্রকল্পের আওতায় ডোপ টেস্টের প্রয়োজনীয় টেস্ট কিট যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হবে, কনফার্মিটি টেস্ট যন্ত্র, বিকারসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য যন্ত্র, প্রয়োজনীয় রাসায়নিক, অফিস সরঞ্জাদি ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি কেনা হবে। যন্ত্রপাতিগুলো প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট লোকবলের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি স্থাপন ও চালু করা হবে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিগুলোর যথাযথভাবে চালু ও ছোট-খাটো মেরামত যাতে নিজস্ত লোকবল করতে পারে, এজন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। অভিজ্ঞতার আদান-প্রদানের জন্য সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের সময়ের সিঙ্গাপুর ও কলম্বিয়া দেশে স্টাডি ট্যুরের আয়োজন করা হবে এবং প্রকল্প পরিচালনার জন্য ২টি যানবাহন এবং অফিস যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রের সংস্থান রাখা হবে।
এর ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করতে ডিপিপি থেকে অনেক বিষয়ে আপত্তি তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলেছে, প্রকল্প গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা ও যৌক্তিকতার ব্যাখ্যা দিতে হবে। প্রকল্পের নাম ‘মাদকাসক্ত সনাক্তকরণে ডোপ টেস্ট প্রবর্তন (প্রথম পর্যায়)’ থেকে প্রথম পর্যায় বাদ দিতে হবে। প্রকল্প শুরুর তারিখ জানুয়ারি ২০২০ প্রস্তাব করা হয়েছে। বাস্তবসম্মতভাবে প্রকল্পের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা যেতে পারে এবং সে অনুযায়ি বছরভিত্তিক ব্যয় প্রাক্কলন সংশোধন করতে হবে। প্রকল্প এলাকা হিসেবে ১৯টি জেলা নির্ধারণের ভিত্তি নিয়ে সভায় আলোচনা করতে হবে এবং আলোচনা মোতাবেক তালিকা ডিপিপিতে সংযুক্ত রাখতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশন আরও বলেছে, অধিকাল (ওভারটাইম) ভাতা, দায়িত্ব ভাতা ইত্যাদি খাতের প্রয়োজনীয়তা কি এবং এসব অপ্রয়োজনীয় খাত ডিপিপি থেকে বাদ দিতে হবে। মোটরযান ক্রয় না করে পরিবহন সংক্রান্ত্র সেবা ক্রয়ের মাধ্যমে মোটরযানের সংস্থান রাখতে হবে। আসবাবপত্র, স্থানীয় প্রশিক্ষণ, বিদেশ প্রশিক্ষণ, বিকার, টেস্টটিউব, স্যাম্পলিং ট্যুলস, রাসায়নিক, ফয়েল, ফরেনসিক ড্রাগসহ অন্যান্য কিছু খাতে থোক হিসেবে অর্থ বরাদ্দ অত্যাধিক বলে প্রতীয়মান হয়। এসব অংশের একক ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। ডাটা বেইজ সার্ভারের জন্য সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে, যা বেশি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ডাটা সংরক্ষণের জন্য বিসিসির ডাট সেন্টারের ব্যবহার করতে হবে। এবং ডাটা প্রক্রিয়াকরণের জন্য আইসিটি বিভাগের সাথে সমন্বয় করে যথাযথভাবে ব্যয় প্রাক্কলন করতে হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের জনবলের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনবল নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশ অনুসারে জনবলের সংখ্যা ও ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে। কিভাবে টেস্ট করা হবে তা সংক্ষিপ্ত ও সুনির্দিষ্টভাবে ডিপিপিতে উল্লেখ করতে হবে।
এ বিষয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ক্রয়, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. হামিমুর রশিদ বলেন, প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পটি দেশের ১৯টি জেলায় বাস্তবায়ন করা হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে দেশের ১৯টি জেলার ল্যাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্তের স্বার্থে যে কাউকে ডোপ টেস্ট করাতে পারবে। এছাড়া সরকারি যেকোন দপ্তর যদি প্রয়োজন মনে করে তাহলে নিয়োগের আগে লোকবলের ডোপ টেস্ট করাতে পারবে। এর বাইরে সাধারণ জনগণ চাইলে আবেদনের মাধ্যমে টেস্ট করাতে পারবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশে মাদক সেবন হ্রাস পাবে। রেজা