আগামী বছরের মধ্যেই দেশে গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুতের মোট উৎপাদন হবে ২১ হাজার ৩৬৯ মেগাওয়াট : জিইডি
সাইদ রিপন : সরকারের প্রক্ষেপণ অনুযায়ি প্রক্ষেপিত বার্ষিক মোট দেশজ আয় প্রবৃদ্ধির ৯ শতাংশ। ২০২১ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুতের চাহিদা ৯ দশমিক ৩ শতাংশ হারে বাড়বে। ফলে প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি কৌশলের চাহিদা পূরণই মূল উদ্দেশ্য।
সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনার (২০২১-৪১) প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। পরিকল্পনাটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুমোদন হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২১ সালের মধ্যে গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুতের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২১ হাজার ৩৬৯ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে। এছাড়া ২০৩০ সালে এ ক্ষমতা ৩৩ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালে ৫৬ হাজার ৭৩৪ মেগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিদ্যুতের প্রথম মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও গ্রহণ করা হয় ১৯৮৫ সালে এবং হালনাগাদ করা হয ১৯৯৫, ২০০৬, ২০১০ ও ২০১৬ সালে। বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও প্রাথমিক জ্বালানি সংশ্লিষ্ট মিশ্রণের জন্য কৌশলসহ বেসরকারি খাতের ভূমিকা, বিদ্যুৎ বাণিজ্য, বিদ্যুৎ ব্যবহারের দক্ষতা ও মূল্য নির্ধারণ কৌশল সন্নিবেশিত হয়। ২০০৯ এবং ২০১০ সালে স্বল্পমেয়াদী জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য, গ্যাস সংকটের কারণে ব্যয়বহুল তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। মহাপরিকল্পনা ২০১০ অনুযায়ী ২০৩১ সালের মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ৫০ শতাংশ কয়লানির্ভর, ২৫ শতাংশ গ্যাস এবং ২৫ শতাংশ অন্যান্য উৎস্য থেকে। এরপর ২০১৬ মহাপরিকল্পনায় বৃহদায়তনিক ও স্বল্পব্যয়ি জ্বালানি বিকল্প গ্রহণসহ পর্যায়ক্রমে রেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট কমিয়ে এনে স্বল্পব্যয় সম্পন্ন বিদ্যুৎ বিস্তারের দিকে সরে আসার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। ২০১৬ এর ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ এর বিদ্যুৎ বিস্তার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতালব্ধ শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে পাঁচ বছর পর এই কৌশল হালনাগাদ করা হবে।
জলবিদ্যুৎ, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ও পরমাণু এগুলোর প্রতিটিই স্বল্পব্যয় বিদ্যুৎ বিস্তারের অংশ। তরল জ্বালানি, ব্যয়বহুল জ্বালানি এবং স্বল্প ব্যয়ভিত্তিক জ্বালানি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে এগুলোর ব্যবহার ও ক্রমাগত হ্রাস পাবে। তবে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ ভালো। বিদ্যমান পরিচিত কয়েকটি গ্যাস-উৎসের মজুদের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশকে এটি এতদিন ভালো সেবা দিয়েছে। যদিও সেগুলো দ্রুত কমে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য উন্নততর মূল্য নির্ধারণ ও চাহিদা ব্যবস্থাপনাসহ নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের জন্য আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা নেওয়া হবে।
এছাড়া এলএনজি ও তরল জ্বালানির মতোই কয়লাও আমাদের সামনে স্বল্পব্যয়ভিত্তিক বিদ্যুৎ বিস্তারের পথ মেলে ধরে এবং এটি বিদ্যুৎ খাত মহাপরিকল্পনার একটি কেন্দ্রীয় উপাদান। এক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হলো, পরিবেশের ওপর এর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাবের বিরুদ্ধে লাগসই প্রযুক্তি ও পরিবীক্ষণের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী রক্ষাকবচ গড়ে তোলা। পারমাণবিক বিদ্যুৎ দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যুৎ সরবরাহে বৃহত্তর ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। সরকার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পকে দ্রুতগামী প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ বিকল্প তৈরির ক্ষেত্রে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ এর আওতায় নিরাপত্তামানের আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য মাত্রা নিশ্চিত করতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করা হবে। তবে আগামীতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। সৌর বিদ্যুতের পাশাপাশি বাতাস, স্রোত এবং বর্জ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সুযোগ খতিয়ে দেখা হবে। জ্বালানিখাতে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ২০৪১ সালে বিদ্যুতের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে বেসরকারি পর্যায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ভূমিকাকে অধিকতর উদ্দীপ্ত করতে হবে। বাংলাদেশ যেহেতু বিদ্যুৎ বিস্তার কর্মসূচিতে রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে সরে আসছে, তাই বৃহদাকারে ও জ্বালানি দক্ষ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ভিত্তিতে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনের দক্ষতা বাড়বে। এটিই হবে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন কৌশলের প্রধান উদ্দেশ্য। বর্তমানে বিতরণ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের একচ্ছত্র অধিকার। বাংলাদেশ যখন আরও উন্নত হয়ে একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে তখন দক্ষতা ও প্রতিযোগিতা বিকাশে বিদ্যুতের বেসরকারি বিতরণের জন্য বিকল্প অনুসন্ধানই যুক্তিযুক্ত হবে। এ ব্যাপারে অধিকতর স্বায়ত্তশাসনসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেবার দাম নির্ধারণ ও সঠিক নিয়ন্ত্রণ সক্ষম মানসম্পন্ন জনবল গড়ে তোলার মাধ্যমে বাংলাদেশ জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিইআরসি) ভূমিকা শক্তিশালী করা হবে। রেজা