চট্টগ্রামের এক শপিংমলে ২৬৩টির মধ্যে ২০৩ প্রতিষ্ঠান ভ্যাট দেয় না
সুজন কৈরী : চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ, বায়েজিদ বোস্তামি সড়কে অবস্থিত অভিজাত শপিংমল মিমি সুপার মার্কেটে ২৬৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অনেকে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছেন। তারা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্রান্ডের ভোগ্যপণ্য বিক্রি করছেন। আবার কেউ কেউ পণ্য আমদানির সঙ্গেও জড়িত। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই ভ্যাট দেয় না। নতুন ভ্যাট আইনের অন্তর্ভুক্ত হয়নি। অল্পসংখ্যক প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন নিলেও বেশিরভাগ আইন মানছে না। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দা সংস্থা ওই মার্কেটে জরিপ চালিয়ে এমন তথ্য জানতে পেরেছে। আইন অনুযায়ী নিবন্ধন গ্রহণ না করায় ওই ২০৩ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রোববার পৃথকভাবে মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। এনবিআরের নির্দেশে পরিচালিত এই জরিপ অনুসারে, ২৬৩টির মধ্যে নতুন আইনে নিবন্ধিত হয়েছে মাত্র ৬০টি। অবশিষ্ট ২০৩টির কোনো নিবন্ধন নেই। ওই মার্কেটে এসব প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করলেও তারা ভ্যাট দেন না।
ভ্যাট গোয়েন্দার গোপন তথ্য অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করলেও তা সরকারি কোষাগারে জমা দেয় না। ভ্যাট আইন অনুযায়ী বাধ্যবাধকতা থাকলেও ২০৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থানীয় ভ্যাট অফিসে দাখিলপত্রও দেয় না। তারা আইন ভঙ্গ করে ব্যবসা চালাচ্ছেন।
অপরদিকে ভ্যাট গোয়েন্দার জরিপে দেখা যায়, শপিংমলের ৬০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনভুক্ত হলেও অনেকে প্রকৃত বিক্রি অনুযায়ী রিটার্ন ও ভ্যাট পরিশোধ করছে না। তাদের মধ্যে মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠানে ভ্যাট সনদ ঝুলিয়ে রেখেছে। অবশিষ্ট ৫০টি নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানে দৃশ্যমান স্থানে ভ্যাট সনদ পাওয়া যায়নি। ভ্যাট আইন অনুযায়ী নিবন্ধন সনদ দৃশ্যমান স্থানে ঝুলিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক, যাতে ক্রেতা বুঝতে পারেন তিনি সঠিক স্থানে ভ্যাট দিচ্ছেন। আইন অনুযায়ী নিবন্ধন গ্রহণ না করায় এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা রোবাবর অনিবন্ধিত ২০৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পৃথকভাবে মামলা দায়ের করেছে। সেইসঙ্গে নিবন্ধিত ৬০টির মধ্যে ৫০টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন সনদ ঝুলিয়ে না রাখায় ভ্যাট আইনে তাদের বিরুদ্ধেও অনিয়ম মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা। এমন অনিয়মের দায়ে তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করার বিধান রয়েছে বলে জানিয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। তবে ভ্যাট গোয়েন্দার প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনিবন্ধিত ২০৩টি মামলা দায়েরের অভিযোগের পাশাপাশি ব্যবসার শুরু থেকে তাদের প্রকৃত খরচের ভিত্তিতে আগের ফাঁকিকৃত ভ্যাট হিসাব করে বকেয়া ও মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদসহ জরিমানা আদায়ের জন্য চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটকে অনুরোধ করা হয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দা, অনুসন্ধান ও অডিট বিভাগের ডিজি ড. মইনুল খান বলেন, ভ্যাট আইনে দায়ের করা মোট ২৫৩টি মামলা আইনানুগভাবে ন্যায় নির্ণয়নের জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, ভ্যাট গোয়েন্দা সংস্থার উপপরিচালক তানভীর আহমেদের নেতৃত্বে একটি দল গত ৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের মিমি সুপার মার্কেট সরেজমিনে পরিদর্শন করে। এ সময় মার্কেট মালিক সমিতির নেতারা উপস্থিত থেকে ভ্যাট গোয়েন্দাদের জরিপ কাজে সহযোগিতা করেন।
ভ্যাট গোয়েন্দারা বলছেন, চট্টগ্রামের বড় শপিংমলের দোকানগুলোর মধ্যে ৭৮ ভাগই ভ্যাট দেয় না। দেশের অন্যান্য মার্কেট ও খুচরা পর্যায়েও একই চিত্র বিরাজ করছে বলে তাদের ধারণা। দেশের মধ্যে প্রতিযেগিতামূলক ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সকল ভ্যাটযোগ্য ব্যবসাকে দ্রুত ভ্যাট ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যবসায়ী ও ভ্যাট কমিশনারেটের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য শপিংমল, মার্কেট ও বিভিন্ন স্থানে ভ্যাট গোয়েন্দাদের জরিপকাজ চলবে।