এমসি কলেজ ছাত্র বাসে দলবদ্ধ ধর্ষণ আদালতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে তিন ধর্ষকের নাম বললেন সাইফুর-অর্জুন
তিন জন পাঁচদিনের রিমান্ডে, আদালত
চত্বরে জনতার ক্ষোভের মুখে আসামিরা
আব্দুল আহাদ : সিলেটের মুরারীচাঁদ কলেজ (এমসি কলেজ) ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে স্বামীকে আটকে রেখে তরুণী গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্মী রাজন ও আইনুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রোববার রাত একটায় সিলেটের ফেঞ্জুগঞ্জের কচুয়া নয়াটিলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব-৯ এর একটি দল।
এনিয়ে চাঞ্চল্যকর এই ধর্ষণ মামলায় এজাহার নামীয় চারজনসহ ৬ ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেফতার করল পুলিশ ও র্যাব। এর মধ্যে সোমবার দুপুর ও বিকেলে দুই দফায় গণধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমানসহ ৩ জনকে ৫ দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
র্যাব-৯ সিলেটের একটি সূত্র গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। গ্রেফতারকৃত রাজন ও আইনুল ছাত্রাবাসে তরুণীকে গণধর্ষণ মামলার অজ্ঞাত আসামি ছিলো। ছায়া তদন্তে নেমে র্যাব এতথ্য নিশ্চিত হয়ে তাদের গ্রেফতার করে। এনিয়ে চাঞ্চল্যকর এ মামলায় ৬ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলো। এরমধ্যে চারজন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। আর অপর দুজন মামলার অজ্ঞাতনামা আসামি। তিন আসামি পাঁচদিনের রিমান্ডে : তরুণী গৃহবধূকে গণধর্ষণ মামলার তিন আসামিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। সোমবার বিকেলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এমসি কলেজ শাখার সভাপতি রবিউল হাসানকে সিলেট মহানগর হাকিম ২য় আদালতের বিচারক মো. সাইফুর রহমান তার এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরআগে দুপুর ১২টায় একই আদালতে এই মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান ও ৪ নম্বর আসামি অর্জুন লস্করেরও পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালতে জামিন শুনানিতে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী অংশ নেননি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট খোকন কুমার দত্ত। সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারি কমিশনার অমূল্য ভূষণ চৌধুরী জানান, গণধর্ষণ মামলার আসামি সাইফুর, অর্জুন ও রবিউলকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরাণ থানার ওসি তদন্ত ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য তাকে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত তাদেরকে পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালত চত্বরে জনতার ক্ষোভের মুখে সাইফুর-অর্জুন : সোমবার বেলা ১১ টা ৪০ মিনিট। কড়া পুলিশ প্রহরায় প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে নিয়ে আসা হয় সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্করকে। দুজনই এমসি কলেজে তরুণী ধর্ষণ মামলার আসামি। এর মধ্যে সাইফুর প্রধান আসামি। আদালতে হাজির করার আগেই আদালত চত্বরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ।
সাইফুর ও অর্জুনকে আদালত চত্বরে হাজির করার পর পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যেই বিক্ষোভ করেন উপস্থিত জনতা। এই দুই আসামিকে নিয়ে আসার পর আদালতে চত্বরে শতাধিক জনতা জড়ো হন। তারা দুই আসামিকে দেখা মাত্রই ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই’ শ্লোগান শুরু করেন। ‘জানোয়ার, জানোয়ার’ বলেও শ্লোগান দিতে দেখা যায় অনেককে। কেউ কেউ ‘মার, মার’ বলেও হাঁক দেন। তবে পুলিশ তৎপর থাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
জনতার এই ক্ষোভের মধ্যেই পুলিশ নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে সাইফুর ও অর্জুনকে সিলেট মহানগর হাকিম ২য় আদালতে হাজির করে।
আদালতে নিজেদের নির্দোষ দাবি : এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে স্বামীর সামনে স্ত্রীকে গণধর্ষণের সাথে নিজেরা জড়িত নয় বলে আদালতে দাবি করেছেন মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমান ও চার নম্বর আসামি অর্জুন লস্কর। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে এই দুই আসামিকে সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মো. সাইফুর রহমানের আদালতে হাজির করে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তবে রিমান্ড শুনানীকালে তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
এসময় আদালতে কাঠগড়ায় দাড়িয়ে থাকায় গণধর্ষণ মামলার আসামি সাইফুর ও অর্জুন ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করে বক্তব্য দেন। তারা বলেন, ‘আমরা অপরাধের সঙ্গে জড়িত নই। রাজন ও আইনুল ও তারেক গৃহবধূকে গণধর্ষণ করেছে।’
গণধর্ষণের ঘটনায় শনিবার সকালে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর স্বামী বাদি হয়ে দায়ের করা মামলায় ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমানকে প্রধান আসামি করে তারেক, অর্জুন, রনি, মাসুম ও রবিউলের নাম উল্লেখ করেন। তবে রাজন ও আইনুল এজাহারভুক্ত আসামি নয়। এর মধ্যে রাজনকে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে এবং তাকে সহায়তা করায় আইনুলকে রোববার রাতে ফেঞ্চুগঞ্জের কচুয়া নয়াটিলা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব ৯ এর একটি দল। এখন পর্যন্ত মাসুম ও তারেককে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।