আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
ড. আইনুন নিশাত বলেন, অর্থনীতিতে এর প্রভাব প্রত্যক্ষ নয় দেশের অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে আর্সেনিকের
প্রিয়াংকা আচার্য্য : বিংশ শতকে দেশে আর্সেনিকযুক্ত পানির বহুল ব্যবহারে মানুষ শুধু শারীরিক ক্ষতির স্বীকারই হয়নি এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে। ব্যাপকহারে গণবিষক্রিয়ার এমন ঘটনা ইতিহাসে অন্যতম বলে দাবি করছে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা।
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ মার্ক রোজেনজওয়েইগ, ব্রাউন বিশ^বিদ্যালয়ের মার্ক পিট ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের মো. নাজমুল হাসানের সম্মিলিত গবেষণায় প্রথমবারের মতো অর্থনীতিতে আর্সেনিকের ক্ষতি সম্পর্কিত বিস্তারিতভাবে তথ্য উঠে আসে।
উল্লেখ্য, এই প্রতিবেদনটি পিয়ার-রিভিউড জার্নাল ‘রিভিউ অফ ইকোনমিক স্টাডিজে’ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। তবে তার আগে এটি অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের মানুষের শরীরেই কেবল নয়, আর্সেনিকের প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা ও উপার্জন ক্ষমতার ক্ষেত্রেও।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, আসলে গবেষণাটা কোন প্রেক্ষিতে করা হয়েছে এক্ষেত্রে তা গুরুত্বপূর্ণ। আর্সেনিকের প্রভাবে মুখে ও শরীরে দাগ পড়ে। হাত ও পায়ের তালু শক্ত হয়ে যায়। আমরা দেখেছি যে, যশোর এলাকার অনেক মেয়ের মুখে দাগ পড়ায় অনেকের বিয়েও হয়নি। হাত-পায়ের তালু শক্ত হয়ে যাওয়া কাজ করার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়। তবে তার প্রভাব আদৌ সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বা উপার্জন সক্ষমতার ওপর পড়বে কিনা তা অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে।
মঙ্গলবার ইয়াহু নিউজে প্রকাশিত এক খবরে হয়, বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলে আর্সেনিকযুক্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের শরীরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি মাত্রার পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ জাতীয় পর্যায়ে আর্সেনিক প্রতিরোধে অনেক কর্মসূচি গ্রহণ করে। এর মধ্যে গভীর নলকূপ বসানোর কার্যক্রম অন্যতম। অর্থনীতিবিদ মার্ক রোজেনজওয়েইগ বলেন, এই গবেষণা থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে মানব শরীরের বাইরেও আর্সেনিকের ক্ষতিকর প্রভাব বিদ্যমান। অর্থনীতিতে এর প্রভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে, এটি পারস্পরিক সম্পর্কের পরিণতি। যা আণবিক জেনেটিকস বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা সত্যিকারের অবস্থা শনাক্ত করতে পারি।
১৯৮২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সংগ্রহ করা বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা বলছেন, আর্সেনিকের প্রভাবে মানবসম্পদ ক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশে আর্সেনিকের বিষক্রিয়া যেসব শিশুর শরীরে রয়েছে, তাদের স্কুলে উপস্থিতির সংখ্যা কম। বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রেও আক্রান্তরা পিছিয়ে থাকছেন।
গবেষকেরা বলছেন, তরুণদের শরীরে যে পরিমাণ আর্সেনিক শনাক্ত হচ্ছে সেটি অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারলে প্রশিক্ষিত চাকরির বাজার ২৪ শতাংশ ত্বরান্বিত হবে। উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বাড়বে ২৬ শতাংশ।
প্রতিবেদন আরও বলা হয়, আর্সেনিকের মাত্রা যুক্তরাষ্ট্রের সমান করা গেলে পুরুষদের উপার্জন ৯ শতাংশ বাড়বে। পাশাপাশি নারীদের গৃহস্থালির উৎপাদনশীলতাও বাড়বে।