আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৩
এই দশকে প্রবৃদ্ধির চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও মেক্সিকোর পক্ষে বাজি ধরেছেন অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু
বিশ^জিৎ দত্ত : ২০২১ সাল মাত্র শুরু হয়েছে। এই সময়ে বিশে^ ২টি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। যার প্রভাবে আমরা ২০২০ সালের ভিতিকর ও ভৌতিক অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে বের হতে পারবো। এ দুটি ঘটনা হলো, কোভিডের টিকার ব্যবহার ও যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক। বিশ^ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও কর্নেল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিভাগের অধ্যাপক কৌশিক বসু টুইটারে এ বছরের অর্থনীতি নিয়ে এমন টুইট করেন। সেখানেই তিনি নিজের লেখা একটি নিবন্ধেরও লিংক দেন। সেখানে তিনি লিখেন, আগামী ১০ বছর বিশে^র অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আধিপত্য রাখবে ৩টি দেশ। তার হিসাবে এই ৩ দেশ হলো, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও মেক্সিকো। তিনি এই ৩ দেশের প্রবৃদ্ধির পক্ষে বাজি ধরতেও রাজি আছেন বলে জানান। তিনি নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ বাংলাদেশ ও ভারতের কথাও উল্লেখ করেন। কিন্তু তিনি এ ২টি দেশের পক্ষে বাজি ধরতে চান না।
তিনি বলেন, বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া একটি উন্নত অর্থনীতির দেশ। ১৯৭০ সালের পর তাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। এই ২ দশকে তাদের উন্নয়ন স্থিতিশীল হয়েছে। এই ২ দশকের উন্নয়নের মূলে রয়েছে তাদের মানবসম্পদের উন্নয়ন। ধনী দেশগুলো যখন গত ২ দশকে তাদের উন্নয়ন তেমন বাড়াতে পারেনি দক্ষিণ কোরিয়া এর ব্যতিক্রম। তারা ধারাবাহিক উন্নয়ন করে যাচ্ছে। তারা মানব উন্নয়নে বিশে^ সবচেয়ে বেশি খরচ করে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জাপান। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন রয়েছে তাদের অনেক পিছনে। এই মানব উন্নয়নের জন্য তারা দেশ সেরা ছাত্রদের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার একজন শিক্ষক দেশের ধনী মানুষদের মধ্যে পরে। তারা দেশের সর্বোচ্চ বেতন পান। অভিন্ন শিক্ষা পদ্ধতি, গোড়ামি মুক্ত শিক্ষাদান। তাদের মেধা বিকাশকে তরান্বিত করেছে। আগামী দশকে দক্ষিণ কোরিয়া অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে জাপানকে অতিক্রম করবে।
নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ ভিয়েতনাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশটি করোনার সময়েও তাদের প্রবৃদ্ধি প্রায় ৩ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখতে পেরেছে। দেশটির মাথাপিছু আয় এখন ভারতের সমান। দ্রুত বর্ধনশীল দেশ ভারত ও চীনের মাথাপিছু আয়ের পরেই রয়েছে এই দেশটির মাথাপিছু আয়। এই গল্পের শুরু ১৯৮৬ সালের কমিউিনিস্ট পার্টির গ্রহণ করা ডং মাই পলিসি। অর্থাৎ বাজার নির্ভর অর্থনীতি। তারা বাণিজ্যের জন্য তাদের সীমান্ত উন্মুক্ত করেছে। শুল্কহার কমিয়েছে। বৈদেশিক বিনিয়োগের একটি হাব হয়ে উঠেছে দেশটি। এখানে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ ও ভূমি রয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মানবসম্পদের উন্নয়ন। অভিন্ন আধুনিক শিক্ষা দেশে একটি দক্ষ জনশক্তি তৈরি করেছে। ভিয়েতনাম দ্রুত হয়ে উঠছে বিশে^র প্রধান অর্থনৈতিক হাব।
মধ্য উন্নয়নশীল দেশ মেক্সিকোর গল্পটা শুরু করেছেন প্রেসিডেন্ট আমলো। ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর নিজের একটি স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তিনি তুলে ধরতে পরেছেন দেশ বাসীর সামনে। তিনি প্রেসিডেন্টশিয়াল প্রসাদ ত্যাগ করেছেন। নিজে থাকেন একটি সাধারণ বাড়িতে। গার্ড, প্রেসিডেন্টের জন্য বিশেষ বিমান তিনি ত্যাগ করেছেন। এমনকি বিমানটি বিক্রির জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন। তার এই স্বচ্ছতা দেশটির মানুষদের উজ্জীবিত করেছে। দুর্নীতি ও মাদকে ডুবে থাকা দেশটি বেরিয়ে আসছে গহ্বর থেকে। বিনিয়োগকারীদের উল্লেখযোগ্য গন্তব্য হয়ে উঠেছে দেশটি। বিশেষ করে আমেরিকা ও কানাডার অ্যাডভান্স টেকনোলজির ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হয়ে উঠছে দেশটি। ১০ বছরে মেক্সিকো হবে অ্যাডভান্স টেকনোলজির গুরুত্বপূর্ণ হাব। ভারত সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশ^মানের তথ্য প্রযুক্তি ও ওষুধ শিল্প থাকার পড়েও দেশটির অর্থনীতিতে পাজেল অবস্থা রয়েছে। এটি কাটিয়ে উঠেতে পারবে না বলেই তিনি মনে করেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে তেমন কিছু বলেননি। তবে বলেন, বাংলাদেশ লাইক ভারত।