ইচ্ছা আছে একটা বায়োটেক প্রতিষ্ঠার দেশে করোনার জিনোম সিকোয়েন্স প্রথম করেছি
ড. সমীর কুমার সাহা
ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করা একটু কঠিন ও ভিন্ন কাজ। আমাদের উদ্যোগ ও ইচ্ছা শক্তির কারণে আমরা এই কঠিন কাজটা করতে পেরেছি। আর করোনার জিনোম সিকোয়েন্স আমরাই প্রথম করি। দিনরাত চেষ্টা করে আমাদের একটা দল এই কাজটা করেছে। আমাদের যে মেশিনটা ছিলো সেটা ছিলো খুব ছোট। কিন্তু অনেকের কাছে বড় মেশিন থাকা সত্ত্বেও তারা কাজটি উদ্যোগ নিয়ে করতে পারেনি। তবে সব থেকে আনন্দের বিষয় হলো আমাদের সিকোয়েন্সিংয়ের পরে বাংলাদেশের সব মেশিনগুলো সচল করা হয়েছিলো। সবাই কাজ শুরু করেছিলো। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৮০০ ভাইরাসের সিকোয়েন্সিং হয়েছে। আমরা করেছি প্রায় ১২০টার মতো ভাইরাসের সিকোয়েন্সিং। তার মানে বাংলাদেশে অনেক বড় পরিসরে ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কাজ চলছে।
সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে আমারা একটা ভাইরাসের গতি প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে পারি। বিশেষ করে টিকা তৈরির জন্য সিকোয়েন্সিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানবকল্যানে কাজে আসে এমন বিষয়েই সিকোয়েন্সিং করতে হবে। অহেতুক কোনো বিষয়ে সিকোয়েন্সিং করে সময় ও অর্থ নষ্ট করা ঠিক না। নতুন নতুন ভাইরাস ও টিকা তৈরির জন্য আমরা ভাইরাসের সিকোয়েন্সিং করছি। সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে একটা রোগের আগমন বোঝা যায় যেমনটা আমরা চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে বুঝতে পারি।
ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা দুই থেকে আড়াইশ অভিজ্ঞ মানুষ নিয়ে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করেছি। তবে আমাদের ইচ্ছা আছে একটা গবেষণা প্রতিষ্ঠান বায়োটেক প্রতিষ্ঠা করবো। এছাড়াও আমরা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করবো বিভিন্নœ গবেষণায় অংশ নেবো। মাস্টার্স এবং পিএচডি করতে যারা বাইরে যেতে পারে না, তারা চাইলে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবে। বিভিন্ন দেশ থেকে পিইচডি করে এসে ছেলে-মেয়েরা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবে। আমরা এমন একটা প্লাটফর্ম তৈরি করতে চাই, আমাদের দেশের মেধাবীরা যাতে দেশে থেকে কাজ করতে পারে এবং নতুন নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে বিশ্বকে আমরা দেখিয়ে দিতে পারি।
আমরা যেন বলতে পারি, বিশ্ব দেখো আমরাও পারি। আমরা যদি একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারি তাহলে অনেক বড় কিছু করতে পারবো। আগামী দুই তিন বছরের মধ্যে আমরা আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবো বলে আশা করছি। পাশাপাশি মেয়েদের জন্য ভালো কাজের পরিবেশ তৈরির পরিকল্পনা করছি। আমরা যদি এনিজেরা দাঁড়াতে পারি তখন সরকারও আমাদের দেখবে। সঠিকভাবে কাজ করতে পারলে এবং অপচয় না করলে সরকার কখনো অর্থ ব্যয়ে কার্পণ্য করে না। যে দেশের সরকার পদ্মা সেতু করতে পারে, যে দেশের সরকার এতো বড় বড় ফ্লাইওভার ও এক্সপ্রেসওয়ে করতে পারে। সেই দেশের সরকার আমাদের এই কাজে অর্থ ব্যয়ের বিষয়টি নিশ্চই বিবেচনায় রাখবে।
পরিচিতি : চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক। সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লেখাটি লিখেছেন আমিরুল ইসলাম