প্রথম পাতা • লিড ৫ • শেষ পাতা
প্রকল্পে ত্রুটির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ
ফাতেমা আহমেদ : যাদের গাফিলতি ও অবহেলার কারণে পল্লী সেতু নির্মাণ প্রকল্পে অতিরিক্ত অর্থ ও সময় ব্যয় হয়, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। একজন ব্যক্তির একাধিক প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) হওয়ার বিষয়টি আর সহ্য করা হবে না। যারা একাধিক প্রকল্পে পিডির দায়িত্ব পালন করছেন, অতি দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিয়ে তাকে জানাতে নির্দেশনা দিয়েছেন।
একনেক বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেখা যায়, সংশোধনের সময় দুই-একটি আইটেম নতুন আসে। যার জন্য মূল্য বেড়ে যায়।’
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এই যে পিডি নিয়োগ, একই ব্যক্তি একাধিক প্রকল্প নিয়ে বসে থাকেন এবং ঢাকায় বসে থাকেন, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, এটা সহ্য করবেন না। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের বলেছেন, যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেন। সরকারের বিধিবিধানেই আছে। তিনি বলেছেন, এটা যেন আর না হয়।’
‘প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন হলোÑ যখন প্রকল্প তৈরি করেছিলেন, এসব বিষয় কি দেখে দেননি। আপনারা প্রকল্পের সাইটে যাননি। এটা হলে নতুন সেতু কোথা থেকে পাচ্ছেন। এটা কেনো আগে আসল না।’
এম এ মান্নান আরো বলেন, ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের সংশোধন করতে গিয়ে দাম বেড়েছে, অনেকগুলো আইটেম নতুন চলে এসেছে। মূল প্রকল্প ডিজাইনে ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন হলো যারা ডিজাইন করেছেন, অর্ডার দিয়েছেন তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সংশ্লিষ্ট সকলকে ওই সকল ব্যক্তিকে চিহ্নিত করুন। কাদের গাফিলতির জন্য আমাদের প্রকল্পের ডিজাইনটা ইনকারেক্ট (ভুল) হলো, আমাদের সময় ও অর্থ অপচয় হলো। তাদের বিরুদ্ধে আপনারা আইনানুগ, বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন। আগামীতে যাতে না হয়, সকলের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন যে, আপনারা যার যার অবস্থান থেকে সাবধান হয়ে যান।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার সদস্যদেরকে তখনও বলেছি, এখনও বলছি, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কিছু অবজারভেশন আসে। সুতরাং এ সকল বিষয়ে আমরা অধিকতর সচেতন হব। প্রকল্প যখন আসে, তখন তাড়াহুড়ো থাকে। সবাই এসে বলে, ভাই দেন না করে, দেন না করে।’
এ ক্ষেত্রে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কোনো দায় আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, অস্বীকার করছি না। এটা হয়েছে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বললেন না যে, খুঁজে বের করুন কাদের দায়ে এ অবস্থা হলো। তাদের বিরুদ্ধে শুধু ব্যবস্থা নয়, তিনি জানাতে বলেছেন যে, কী ব্যবস্থা নিলেন আমাকে (প্রধানমন্ত্রীকে) অবহিত করতে হবে।’
মহাপরিকল্পনা করে সেতু তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে তার (প্রধানমন্ত্রী) বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘সারাদেশে আমরা পথে-ঘাটে সেতু বানাচ্ছি। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বললেন যে, আপনাদের থাকতে হবে মাস্টার প্ল্যানে। কোন্ নদীতে কোথায় কোন্ জায়গায় সেতু হবে, আপনারা এত বড় বড় বিভাগ আছেন, আপনারা মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেন। তারপর সে অনুযায়ী কাজ করেন। অন দ্য স্পট ডিসিশন না নিয়ে মাস্টার প্ল্যান থেকে নেন। এটা আমাদের সবার নজরে রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সাইট সিলেকশনে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। পক্ষপাতিত্বমূলক বা কাউকে ফেভার (সুবিধা দেয়া) করে নির্বাচন করা যাবে না। জনগণের প্রয়োজনে নির্মাণ করতে হবে। একাধিক, অহেতুক সেতু বানিয়ে নদীর প্রবাহ যেন বাধাগ্রস্ত না করে। প্রধানমন্ত্রী খুবই উদ্বিগ্ন। এটা নিয়ে তিনি প্রায়ই এ কথা বলেন।’
সেতু নির্মাণে স্থানীয় সরকার, সড়ক ও জনপথ বা সংশ্লিষ্ট অন্যদের এ বিষয়টা নজরে রাখার পরামর্শ দেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সেতু নির্মাণ করে নৌপথে চলাচলে বাধাগ্রস্ত না করার নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’
এম এ মান্নান বলেন, ‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, পানির ব্যবহারে আমরা যেন আরও সচেতন হই। তিনি আমাদের বলেছেন, মানুষকে মোটিভেট করেন। বোঝান। আমরা যেন পানির অপচয় না করি।’
তথ্য মন্ত্রণালয়, পানি মন্ত্রণালয়, ওয়াসাকে এ বিষয়ে প্রচার চালানোর অনুরোধ জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবারের একনেকে ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধন অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির খরচ দুই হাজার ৫৩০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকল্পের মূল খরচ ছিল তিন হাজার ৯২৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং সংশোধনীতে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ছয় হাজার ৪৫৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
মূল প্রকল্পে ১৩০টি (২৬ হাজার ৭৪০ মিটার) সেতু নির্মাণে বরাদ্দ ছিল তিন হাজার ৩৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সংশোধনে ১৩২টি সেতু (৪১ হাজার ৪৩ মিটার) নির্মাণে খরচ পাঁচ হাজার ৫৩১ কোটি ছয় লাখ টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণ খাতে খরচ বেড়েছে দুই হাজার ১৬৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়ও বেড়েছে। এটি ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। সংশোধনীতে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ ব্যাখ্যা করে পরিকল্পনা কমিশনকে এলজিইডি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, বিআইডব্লিউটিএ’র যাচাই করা ন্যূনতম ভার্টিক্যাল অ্যান্ড হরিজন্টাল ক্লিয়ারেন্স এবং হাইড্রোলজিক্যাল অ্যান্ড মরফোলজিক্যাল স্টাডি রিপোর্ট বিবেচনায় সরেজমিনে সেতুর স্থান পরিদর্শন করে ডিজাইন চূড়ান্ত করা এবং চূড়ান্ত করা ডিজাইন অনুযায়ী সেতুর দৈর্ঘ্য মূল ডিপিপির প্রস্তাবিত দৈর্ঘ্যের চেয়ে বেশি হওয়ায় ব্যয় বাড়ছে। সূত্র : এনটিভি অনলাইন, জাগোনিউজ, পূর্বপশ্চিম। সূত্র : ভিক্টর রোজারিও