আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৩
দশ বছরে উৎপাদনশীলতা ৬০ ভাগ বৃদ্ধি সিন্ডিকেটের কারসাজিতে পেঁয়াজের দাম বাড়ে
মতিনুজ্জামান মিটু : এছাড়া ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বা অতিমাত্রায় ভারতের ওপর আমদানি নির্ভরতায়ও পেঁয়াজের সংকট হয়। একটি আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা ‘বাংলাদেশে পেঁয়াজের প্রাপ্যতা ও দামের অস্থিরতা’ প্রতিবেদন ২০২০-এ এ তথ্য তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ও সিএসও ড. মো. আব্দুর রশীদ এ কথা জানান, বাংলাদেশে পেঁয়াজ সাধারণত মশলা জাতীয় খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উৎপাদনের চেয়ে পেঁয়াজের চাহিদা বেশি হওয়ায় ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে তা আমদানি করতে হয়। বেশিরভাগ সময় রবি ফসল আসার সঙ্গে মিল রেখে আগস্ট থেকে অক্টোবর মাসে পেঁয়াজ আমদানি করা উচিত, যাতে আমদানির জন্য ভালো সুযোগ থাকে।
বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে উৎপাদন পেঁয়াজের বাজারকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। যেহেতু বাংলাদেশ ভারত থেকে পেঁয়াজের চাহিদার বেশির ভাগ আমদানি করে, সেহেতু ভারতের পেঁয়াজ তাৎক্ষণিকভাবে এদেশের বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে। বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম গত কয়েক বছরে বেশ অস্থিরতার মুখোমুখি হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশে মৌসুমী পেঁয়াজের দাম তীব্র হয়ে ওঠে। ভারত যখন রপ্তানি নিষিদ্ধ করে তখন বাংলাদেশে পেঁয়াজের সংকট দেখা দেয়। পেঁয়াজের সরবরাহ পরিবর্তনের সঙ্গে ছোট এবং প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের মজুদ করার প্রবণতাই হলো দাম বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ কারণ। পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ বা প্রশমিত করার জন্য নীতিগতভাবে পেঁয়াজের উৎপাদন, বাণিজ্য, খরচ, দাম এবং মূল্য সম্পর্কিত বিভিন্ন মাত্রা বিশ্লেষণের জন্য এ গবেষণা পরিচালিত হয়।
গবেষণাটি মূলত একটি আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক গবেষক দলের এফডিসির মাধ্যমে পাওয়া তথ্য এবং বিভিন্ন উৎস থেকে মাধ্যমিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয়। বাংলাদেশের শীর্ষ পাঁচটি ক্রমবর্ধমান অঞ্চলকে পেঁয়াজের প্রাথমিক বাজার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পেঁয়াজের বিভিন্ন দেশীয় বাজার এবং আমদানি করা দামের ওপর ভিত্তি করে দামের সংক্রমণ বিশ্লেষণ করা হয়।
ঢাকাসহ পাবনার কাশিনাথপুর বাজার, ফরিদপুরের রসুলপুর বাজার এবং নাটোরের বনপাড়া বাজারে পেঁয়াজ উঠানোর পর পেঁয়াজের সরবরাহ, মজুদ, এবং গবেষণা দামের তথ্য ব্যবহার করে বাজারের আচরণ এবং গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে গবেষণা করা হয়। গত কয়েক বছরে পেঁয়াজের আবাদ, উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। বিশেষ করে ২০১০-১১ সালের পরের ১০ বছরে পেঁয়াজের উৎপাদনশীলতা প্রায় ৬০ শতাংশ বাড়ে। পেঁয়াজের আবাদ ও ফলন পাবনা, ফরিদপুর ও রাজশাহীতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়ে, যার মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশ উৎপাদন হয় পাবনা জেলায়।
বেশ কয়েকটি কারণে দেশীয় বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ব্যাপকভাবে কমে যায়। পাশাপাশি গ্রাহকরা দাম বৃদ্ধির সূচনায় পেঁয়াজ কেনা ও মজুদ করার জন্য প্রচেষ্টা চালায় যা বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার সুযোগ করে দেয়।
তাছাড়া বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণের মধ্যে রয়েছে: সরকারের ব্যবস্থাপনা সমস্যা ও বাজার নিয়ন্ত্রণে কম সক্ষমতা, আমদানির জন্য পেঁয়াজের বিকল্প উৎসের সন্ধানে দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণের অভাব, গ্রীষ্মকালিন পেঁয়াজ ও মুড়িকাটা পেঁয়াজের সীমিত উৎপাদন এবং সঠিক তথ্যের প্রচার অভাব।
গবেষণার সুপারিশে বলা হয়Ñ অসাধু বাণিজ্য সিন্ডিকেট সনাক্ত করে তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করা, সংকটকালীন সময়ে পেঁয়াজ আমাদানির জন্য দ্রুত একাধিক রপ্তানিকারক দেশের সন্ধান করা, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা কমানো, নিয়মিত পেঁয়াজ উৎপাদনের সঠিক তথ্যের প্রচার এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিস্তার বন্ধ করা, কৃষিমূল্য কমিশন গঠনের মাধ্যমে সারা বছর বাজারে পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ ও তদারকি করা এবং বাজারে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ও মজুতের অগ্রীম ব্যবস্থাপনা ও সুচিন্তিত পরিকল্পণা অনুসরণ করা। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও