আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৫ • শেষ পাতা
বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন কুয়াকাটায় বিনিয়োগকারীরা
উত্তম কুমার : বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শুধু স্বাস্থ্য ঝুঁকি নয়, গোটা পর্যটন খাতের অর্থনীতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এর প্রভাবে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় আবাসিক হোটেল-মোটেলসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চরম লোকসানের মুখে পড়েছে। বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। কয়েকমাস বন্ধ থাকার পর প্রশাসনের নির্দেশে পুনরায় স্বাভাবিক হলেও নেই আগের মত দেশি-বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা। এখানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। বন্ধকালীন এসব হোটেল-মোটেলে প্রায় ২০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে হয়েছে দাবি সংশ্লিষ্ট ব্যাবসায়ীদের। এছাড়া চরম লোকসানের মুখে পড়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। অনেকে পর্যটক নির্ভরশীল ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার চিন্তভাবনাও করছেন। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে এবার ব্যবসায় যে ধ্বস নেমেছে, তা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। গত বছরের শুরুতে পর্যটনে নতুন গতি এসেছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর রূপ নেওয়ায় সেই গতি থমকে গেছে। বর্তমানে হোটেল, মোটেল, রেস্ট হাউজ ও রিসোর্টে পর্যটকদের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
কুয়াকাটার একাধিক হোটেল-মোটেল মালিকরা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে পর্যটনমুখী ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। সব থেকে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ট্যুরিস্ট গাইড, পর্যটন নির্ভর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ট্যুর অপারেটররা। ট্যুরিস্টদের উপর নির্ভরশীল নি¤œ আয়ের মানুষেরা একেবারেই কর্মহীন হয়ে পড়েছিল। এখনো তাদের সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন।
সরেজমিনে কুয়াকাটার চরগঙ্গামতি, লাল কাঁকড়ার চর, ঝাউবন, মিশ্রিপাড়া বৈদ্যবিহার, ইকোপার্ক, রাখাইন তাঁতশিল্প পল্লী, মিষ্টি পানির কূপসহ দর্শনীয় স্পটগুলোতে দূরের কোন পর্যটক নেই। বেলাভূমিতে ফুচকা, চটপটি, বাদাম, চানাচুর বিক্রেতাদেরও বেচা বিক্রি কমে গেছে বলে জানিয়েছেন চটপটি বিক্রেতা আলাউদ্দিন।
ফটোগ্রাফার মো. তৈয়ব মিয়া বলেন, লকডাউনের সময় আমরা একেবাইে বেকার হয়ে পড়েছিলাম। এখানে অন্তত দুই শত ফটোগ্রাফার রয়েছেন। আগের মত পর্যটক না থাকায় তাদের আয়ও কমে গেছে।
কুয়াকাটা টুরিজম অ্যাসোশিয়েশনের (কুটুম) সিনিয়র সহসভাপতি হোসাইন আমির বলেন, সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মাঝারি ব্যবসায়ীদের।
কুয়াকাটা সমুদ্র বাড়ির রিসোর্ট-এর পরিচালক জহিরুল ইসলাম মিরন জানান, আগের মতে পর্যটক নেই। রুম বুকিংও কমে গেছে। যা আছে তারা দূরের নয়, কাছা কাছির এলাকার। তবে বিশেষ কোন দিন কিংবা শুক্রবার পর্যটকদেও চাপ বেশি থাকে। এছাড়া লকডাউনের সময় বিদ্যুৎ বিল, স্টাফ ও হোটেল মেন্টেনেসসহ প্রতিমাসে এক লাখ টাকারও বেশি লোকসান হয়েছে।
কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এ এম মিজানুর রহহমান বুলেট বলেন, বর্তমানে কুয়াকাটায় বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা বাণিজ্য মন্দা যাচ্ছে। করোনা গোটা পর্যটন খাতের অর্থনীতিকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, কুয়াকাটায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দেড়শতাধিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে অন্তত এক হাজারের মতো কর্মচারী রয়েছে। তাদের পরিবারের ভরণ-পোষণ মালিকপক্ষকেই দেখতে হচ্ছে। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও