আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৫
আংশিক রপ্তানিকারদের ইডিএফ ঋণ সুবিধা প্রদানের চিন্তা-ভাবনা
সোহেল রহমান : চলমান করোনা পরিস্থিতিতে রপ্তানি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আংশিক রপ্তানিকারকদের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে ঋণ সুবিধাসহ বিভিন্ন নীতি সহায়তা দেয়ার বিষয়টি চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। বর্তমানে শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো রপ্তানি অর্ডারের বিপরীতে শতভাগ ব্যাংক গ্যারান্টি সুবিধার আওতায় জামানত ছাড়াই ঋণ সুবিধা এবং কাঁচামাল আমদানিতে করমুক্ত সুবিধা পায়। কিন্তু আংশিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এসব সুবিধা পায় না। রপ্তানি বাড়াতে এসব উদ্যোক্তাদেরও এ ধরনের সুবিধা দেয়া যেতে পারে বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ’র সদস্যরা ইডিএফ তহবিল থেকে ১.৭৫ শতাংশ সুদে ৩ কোটি ডলার পর্যন্ত এবং অ্যাসোসিয়েশন-বহির্ভূত সদস্যরা ‘ব্যাক টু ব্যাক’ এলসি’র মাধ্যমে বাল্ক আকারে কাঁচামাল আমদানি করার ক্ষেত্রে ৫ লাখ ডলার ঋণ পর্যন্ত নিতে পারেন। বন্ড সুবিধার আওতা বহির্ভূত আংশিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এ সুবিধা পায় না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, যেসব কোম্পানি তাদের উৎপাদিত পণ্য দেশের বাজারে বিক্রি করার পাশাপাশি রপ্তানিও করে, তাদের আংশিক রপ্তানিকারক বলা হয়। ‘রপ্তানি সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি’র আগামী সভায় বিষয়টি তুলে ধরা হবে। এর উদ্দেশ্য মূলত দুটি। একটি হচ্ছেÑ রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ফিরিয়ে আনা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছেÑ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষমতা বাড়ানো। পাশাপাশি চলমান পরিস্থিতিতে আংশিক রপ্তানিকারকদের ইডিএফ ঋণ সুবিধাসহ অন্যান্য নীতি সহায়তা দেয়া হলে রপ্তানি আয় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্রমতে, ওই বৈঠককে সামনে রেখে আরও কিছু প্রস্তাব তৈরি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রয়েছেÑ ‘ইডিএফ’ তহবিলের আকার আরও বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সদ্য গঠিত ‘টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’ (টিডিএফ)-এর আকার বাড়িয়ে সকল রপ্তানিখাতকে এর অন্তর্ভুক্ত করা; রপ্তানি সংক্রান্ত যেকোন সমস্যা সমাধানে বাণিজ্যমন্ত্রী বা সচিবকে প্রধান করে একটি ‘আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন’ এবং ওই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সরকারের সব সংস্থা সিদ্ধান্ত নেবে; অন-লাইনে রপ্তানি আদেশ গ্রহণের জন্য আইসিটি বিভাগের মাধ্যমে একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা; যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানসহ যেসব উন্নত দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে এবং যেসব দেশ থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে, সেসব দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ‘মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি’ (এফটিএ) সই করা ইত্যাদি।
এছাড়া ‘ডিউটি ড্র ব্যাক’ বা ‘শুল্ক বন্ড’ সুবিধার অপ-ব্যবহার বন্ধে এ সুবিধাকে নগদ প্রণোদনার সঙ্গে সমন্বয় করে একটি কাঠামো প্রণয়নের কাজ চলছে। এটি হলে রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাঁচামাল আমদানির সময় নির্ধারিত শুল্ককর পরিশোধ করতে হবে। নগদ সহায়তার হার বাড়িয়ে রপ্তানিকারকদের ওই ক্ষতি পুষিয়ে দেবে সরকার।
এদিকে রপ্তানি বাড়াতে দেশের বাইরে ২১টি দেশে থাকা কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের তাগিদ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কাউন্সিলররা রপ্তানি বাড়াতে কী উদ্যোগ নিচ্ছেন, বিদেশে কাদের সঙ্গে মিটিং করছেন, এর বিস্তারিত লিখিত তথ্য প্রতিমাসে পাঠাতে বলা হয়েছে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের কথা রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের।
প্রসঙ্গত চলতি বছরে দেশের রপ্তানি আয় ৬ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করতে চায় সরকার। এর বিপরীতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয় ১ শতাংশের বেশি কমেছে।