আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
দর পতনের সময় শেয়ার বিক্রি করা উচিত না : মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম স্বপ্ন দেখিয়ে আবারও বড় পতনে শেয়ারবাজার
মাসুদ মিয়া : নতুন বছরের শুরু দিকে নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছিল দেশের শেয়ারবাজারে। সেই রেকর্ড আর ধরে রাখতে পারছে না। বাজার নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করছিল সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। সেই স্বপ্ন বেশিদিন থাকলো না। আবারও বড় ধরনের দর পতন শুরু হয়েছে। হতাশ হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। গত দুই দিনে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইতে ২৭০ পয়েন্ট সূচক কমেছে। বাজার মূলধন কমেছে ১০ হাজার কোটি টাকা।
নতুন বছরের ৫ই জানুয়ারি গত ১০ বছর তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়। ওই দিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৫৪৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা, যা ২০১০ সালের ৭ অক্টোবরে নতুন বছরে শেয়ারবাজার একের পর এক নতুন রেকর্ড হচ্ছিল। সেই রেকর্ড ধরে রাখতে পারছে না শেয়ারবাজার। এবিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমানে শেয়ারবাজার দরপতন হচ্ছে এটার কোন কারণ আমি খুজে পাচ্ছি না। দর পতনের সময় বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রয় করা উচিত না। তবে বিনিয়োগকারীরা কিছু নতুন কোম্পানির শেয়ার বেশি দামে কিনেছে। যারা কিনেছে তারা এখন বাহির হচ্ছে। সে জন্য দরপতন হচ্ছে। সামনে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে আর কতো নামবে। অনেক বিনিয়োগকারীরা লস দেখবে তখন সে ধরে রাখবে। সেল প্রেসারটা কমে গেলে বাজার তখন ঘুরে দাঁড়াবে। মির্জ্জা আরও আজিজ বলেন, বিনিয়োগকারীদের সব সময় নিরাপদে বিনিয়োগ করা উচিত। দেখে শুনে বিনিয়োগ করা উচিত। যেখানে পি রেশিও ভালো আছে, ইপিএস ভালো আছে সেই সব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা উচিত। আর তাড়াতাড়ি শেয়ার বিক্রয় করা উচিত না।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা উল্টা পথে হাঁটে। যখন শেয়ারের দর কমে যায় তখন বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করে আর দাম বাড়লে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনে। যখন দাম আরও বেশি কমে বিক্রয় চাপ বেড়ে যায় তখন বড় দর পতন হয়। দর পতনের সময় লেনদেন কমা শেয়ারবাজারের জন্য ভালো। কারণ শেয়ার বিনিয়োগকারীরা ধরে রাখে তখন লেনদেন কমে। গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়েছে। ফলে বড় পতন হয়েছে সবকটি মূল্য সূচকের। এ দিন শেয়ারবাজারে লেনদেনের শুরু থেকেই ব্যাংক, বীমা, প্রকৌশল, বস্ত্র, ওষুধ, আর্থিক খাতসহ প্রতিটি খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমতে থকে। সেই সঙ্গে দরপতন হয় মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পতনের মাত্রা। এতে দিনভর ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া মাত্র ২৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৩৬টির। আর ৯১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হওয়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক আগের দিনের তুলনায় ১২৮ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩৭৬ পয়েন্টে নেমে গেছে। আগের দিন সূচকটি কমে ১৪২ পয়েন্ট। অর্থাৎ টানা দুই কার্যদিবসের বড় পতনে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক কমলো ২৭০ পয়েন্ট।
অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ৬৭ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক ২০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২১৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিকে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হওয়ায় ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, যা আগের দিন ছিল ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৬৯ কোটি টাকা। বাজার মূলধন কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ কমেছে।