পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের সুযোগ বাড়তে পারে
অর্থনীতি ডেস্ক : মিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পোশাক আমদানিকারী অন্য দেশগুলো যে সুবিধা পাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র অগণতান্ত্রিক সরকারকে গ্রহণ করবে না। সাম্প্রতিক সেনা অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারে সৃষ্ট সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভুগতে পারে দেশটির পোশাক খাত। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশি ক্রেতারা তৈরি পোশাক আমদানিতে অন্যান্য দেশের দিকে ঝুঁকতে পারে।
এদিকে, মিয়ানমারের কারণে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য নতুন সুযোগ আসতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সুযোগ পেলে ক্রেতারা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় অন্য দেশগুলোতে ব্যবসা স্থানান্তর করবেন। টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প বিষয়ক জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা ‘জাস্ট-স্টাইল’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।
আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের (এএএফএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট নেট হারমান বলেন, ‘সোমবারের অভ্যুত্থান বেশ উদ্বেগজনক। আমরা দ্রুত গণতন্ত্রের অধিকার এবং প্রতিষ্ঠানসমূহকে পুনর্বহাল দেখতে চাই। যদি পরিস্থিতি একই রকম থাকে, তবে আমরা মার্কিন সরকারের কাছে দ্রুত নিষেধাজ্ঞা জারির আশা রাখব।’ হারমান নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের সমর্থনের ব্যাপারে প্রায় নিশ্চিত। কেননা, মিয়ানমারের গণতন্ত্র এবং আটককৃত নেত্রী অং সান সু চির জনপ্রিয়তার প্রতি ওয়াশিংটনের পূর্ণ সমর্থন ছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘এএএফএর ধারণা, পৃথিবীর অন্যান্য প্রধান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাও এখন একই আলোচনা করছে।’ এএএফএর বক্তব্য তুলে ধরে নেট বলেন, তাদের সদস্য ব্র্যান্ড, খুচরা বিক্রেতা, আমদানিকারকেরা কিছুকালের জন্য মিয়ানমারে অবস্থানরত কর্মীদের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করবে এবং কর্মীদের প্রতি দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবে। তবে পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদী হলে, দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি, ‘স্থায়ী অংশীদার হিসেবে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করবে এই অভ্যুত্থান।’ ‘আমাদের অনেক সদস্য মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা করে।
মিয়ানমারের জনগণের প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে। সাধারণ মানুষের শ্রমে অর্জিত এ অর্থনৈতিক অগ্রগতির যেন ক্ষয় না হয়, সেজন্য এই সংকটের একটি দ্রুত, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক সমাধান প্রয়োজন,’ বলেন তিনি।
বাংলাদেশের জন্য সুযোগ : ইন্ডাস্ট্রি গবেষক এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান ডিপ্লয় লন্ডনের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর বার্নিস প্যান বলেন, অভ্যুত্থানের কারণে বাংলাদেশে বাণিজ্য আংশিক স্থানান্তরিত হতে পারে।
ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর বিকল্প উৎস থাকলেও, প্রস্তুতকারীরা বড় এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করে থাকে। পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অভ্যুত্থানটি এক ‘জরুরি সতর্ক বার্তা’, তার ওপর দেশটির সামরিক শাসনের ইতিহাসও বেশিদিন আগের নয়। ‘আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যেই যাদের সরে আসার, তারা অন্য দেশগুলোতে সরে যাবে। দক্ষিণ এশিয়ায় অন্য দেশ আছে যারা অপেক্ষাকৃত বেশি স্থিতিশীল, যেমন প্রতিবেশী বাংলাদেশ। মিয়ানমার অপেক্ষা তাদের সেবার মূল্যও কম,’ বলেন প্যান।
তবে মিয়ানমার বাণিজ্য হারালে ভিয়েতনাম তেমন উপকৃত হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এর কারণ হিসেবে বলেন, ভিয়েতনাম সাধারণত উচ্চমানের, দামি পণ্য তৈরি করে থাকে। তারা আসলে মিয়ানমারের চেয়ে চীনের সঙ্গে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এদিকে অভ্যুত্থানের কারণে ক্রেতারা ঠিক সময়ে তাদের পণ্য হাতে পাবে কি না, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা, বলেন প্যান। পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে। ‘কখনো কখনো রাজনৈতিক এই অভ্যুত্থানগুলো কেন্দ্রমুখী হয়ে থাকে। বাকি সবাই বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে,’ বলেন তিনি। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি ফজলুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘মিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পোশাক আমদানিকারী অন্য দেশগুলো যে সুবিধা পাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র অগণতান্ত্রিক সরকারকে গ্রহণ করবে না।’
‘মিয়ানমার থেকে পোশাকের অর্ডার সরানো হলে বাংলাদেশ তার কিছু অংশ পাবে। তবে সবচেয়ে বেশি লাভ হবে ভিয়েতনামের। কেননা, চীনা বিনিয়োগকারীদের মিয়ানমারে কারখানার পাশাপাশি ভিয়েতনামেও কারখানা রয়েছে।’
তবে তিনি এও বলেন, মিয়ানমার থেকে এখানে অর্ডার আসলে কেমন লাভ হবে সেটা নিয়ে এখনই কিছু বলা ঠিক নয়। কেননা, সামরিক সরকার মাত্র কয়েকদিন আগে ক্ষমতায় এসেছে। তবে মিয়ানমার সস্তা পোশাক তৈরি করে বলে বাংলাদেশের সুযোগ বেশি বলেও মন্তব্য করেন ফজলুল হক।
তিনি আরও বলেন, অনেক উন্নয়ন সহযোগী বাংলাদেশের ছোটখাট লুপহোলগুলো খুঁজে বের করে। কিন্তু মিয়ানমারের ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। এখানে ভারসাম্য নিয়ে সমস্যা আছে।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশনের পরিচালক ফজলে শামীম এহসানও একই কথা বলেন। ‘আমরা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে দেখছি না। তবে আমরা আশাবাদী, ক্রেতারা গণতন্ত্র ও মানবতার প্রতি সম্মান দেখিয়ে মিয়ানমার ছাড়বে,’ বলেন তিনি। সূত্র : টিবিএস। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও