ঢাকার চারজনের তিনজনই এখন হতদরিদ্র : ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ
আমিরুল ইসলাম : স্বপ্ন বুননের যাদুর শহর আমাদের রাজধানী ঢাকাতেই এখন ভালো নেই মানুষ। ঢাকার চারজন দরিদ্র মানুষের তিনজনই এখন হতদরিদ্র। ২০১৮ সালে যেখানে প্রতি ১০০ জনে ১৪ জন দরিদ্র মানুষ ছিলো মাত্র দুই বছরের মাথায় সেই সংখ্যা বেড়ে ৩৯ জন হয়েছে। হতদরিদ্রের সংখ্যা এখন ১০০ জনে ৬ জন থেকে চার গুণের বেশি বেড়ে ৩৯ জন হয়েছে। এটা শুধু ঢাকার চিত্র। গত দুই বছর সারা দেশেই হতদিরদ্রের সংখ্যা বেড়েছে।
দেশের মানুষের এই হতদরিদ্র হওয়া দূর করতে কী ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনা মহামারির কারণে শহরে দারিদ্র্য বেড়েছে। শুধু রাজধানী শহরই নয়, করোনার কারণে গ্রামাঞ্চলেও কৃষি ও কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মসংস্থান কমে গছে। যার কারণে অনেকেই বাধ্য হয়ে রাজধানী শহরে চলে এসেছে। গ্রামের মানুষদের মধ্যে শহরের প্রতি একটি আকর্ষণ রয়েছে। অনেকে একটু দরিদ্র হলেই বেশি সুযোগ-সুবিধা পাবার আশায় রাজধানী শহরে চলে আসে। শহরে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও ছোট-খাটো কাজ করে বেশি আয় করা যায় বলে তাদের একটা আকর্ষণ রয়েছে। শহরেও কর্মসংস্থান অনেক কমে যাচ্ছে। অনেক বস্তিবাসী অন্যের বাসায় কাজ করতো, না হয় ছোটখাটো কাজ করতো। করোনার কারণে সেগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে।
কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি (এসএমই) খাতে শহর থেকে শুরু করে একেবারে গ্রাম পর্যন্ত অর্থায়ন করতে হবে। এসব শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলো তাদের উৎসাহি করতে হবে। যাতে করে তারা সহজে পুনরায় কাজ শুরু করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পে অর্থের সংস্থান নেই। তাদের জন্য যে প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিলো সেটা সুষ্ঠুভাবে বন্টন করা হয়নি। সেটি সঠিকভাবে বন্টন করা দরকার। সবকিছু শহুরে না করে গ্রামের দিকে একটু নজর দেওয়া উচিত। কারণ এখন যোগাযোগ ব্যবস্থায় গ্রাম আর শহুরের তেমন তফাৎ নেই। যে জিনিসটা শহরে করবে আউটসোর্সিংয়ের জন্য সেটা গ্রামেও করতে পারে। গ্রামের মানুষদেরকেও উৎসাহ যোগাতে হবে।
সার্বিকভাবে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য আলাদা একটি প্রোগ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। যেটা এখনো নেওয়া হয়নি। অনেক আগে তত্তা¡বধায়ক সরকারের আগে ‘হান্ড্রেড ডেইস অ্যাম্পলয়মেন্ট প্রোগ্রাম করা হয়েছিলো’। ভারতে ‘রুরাল অ্যাম্পলয়মেন্ট জেনারেশন’ নামে আলাদা করে একটি প্রোগ্রাম আছে। বহু অর্থ তারা খরচ করছে বহুদিন ধরে। এরকম স্পেশাল প্রোগ্রাম হাতে নিলে গ্রামের মানুষের আয় কিছুটা বাড়বে। সঙ্গে অন্যান্য লোকের কর্মসংস্থানও বাড়বে। এছাড়া শহরে মানুষের যেসব ছোটখাটো ব্যবসা আছে সেগুলোতে অর্থসহায়তা দিতে হবে তারা যেন পুনরায় চালু করতে পারে। শুধু বড় বড় শহরগুলোতেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলে হবে না। সবগুলো শহর ও শহরতলীতে এর বিক্রেন্দ্রিকরণ করতে হবে। মানুষ চায় তার নিজ এলাকায় থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য করতে। নিজ এলাকার আশেপাশে কর্মসংস্থান ও আয়ের উৎস থাকলে সহজে কেউ মাইগ্রেন্ট করতে চায় না। করোনার সংক্রমণ কিছুটা কমা ও ভ্যাকসিনেশন শুরু হওয়ায় সাধারণ মানুষ শুধু অবাধে চলাফেরা বাড়িয়েছে কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্য এখনো চালু হয়নি। ক্ষুদ্র কুটির ও মাঝারি শিল্পগুলোকে পুনরুদ্বার করতে হবে। রপ্তানি বাণিজ্য ও গার্মেন্টসসহ শুধু বড় শিল্পগুলোর দিকে নজর দিলে হবে না।